নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কি বয়সের ভূমিকা আছে?

নতুন ভাষা শেখা
ছবি: সংগৃহীত

সবসময়ই শিশুদের নানা কিছু শেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তা সে হোক সাঁতার, হোক নতুন ভাষা। বলা হয়ে থাকে, নতুন কোনো দক্ষতা শিখতে চাইলে কম বয়সেই শেখা ভালো। বয়স বাড়লে নাকি নতুন কিছু গ্রহণের সম্ভাবনা কমে যায়।

খেয়াল করে দেখবেন, সাধারণ লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের দেশে ছোটবেলাতেই আরবি শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই শিশুরা প্রথাগত স্কুলের পাশাপাশি যায় জার্মান, ফ্রেঞ্চ কিংবা ল্যাটিন ভাষা শিখতে।

কিন্তু আসলেই কি বয়সের সঙ্গে নতুন ভাষা শিক্ষার যোগ রয়েছে? আসলেই কি বয়স বাড়লে নতুন ভাষাগত দক্ষতা অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে? সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক লরদেস ওর্তেগা বলছেন, গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সব বিষয় শেখার ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থী হিসেবে ভালো। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ে এবং তখন আমরা নতুন কিছু শিখতে চাইলে তা খুব মন থেকেই চাই।

গবেষণা বলছে, বয়ঃসন্ধির পর মানুষের মস্তিষ্কের শিক্ষা গ্রহণের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। নতুন ও ভিন্ন কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশু ও প্রাপ্তবয়ষ্কের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ আলাদাভাবে কাজ করে।

মাতৃভাষার বাইরে অন্য ভাষাতেও যোগাযোগ করতে পারার দক্ষতা একজন মানুষকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেয়। এতে জ্ঞানের যেমন বিকাশ ঘটে তেমনি ভাষার দিগন্তও প্রসারিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ বাড়ে, নতুন নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় নতুন বা দ্বিতীয় ভাষা শেখার প্রবণতা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ ইংরেজি ছাড়াও অন্য ভাষায় কথা বলে। অন্যদিকে ইউরোপের ৫৯ শতাংশের অন্তত আরেকটি দ্বিতীয় ভাষায় কথা বলার যোগ্যতা আছে।

ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষক স্প্যানিশ-আমেরিকার বংশোদ্ভুত ওরতেগা চারটি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তিনি মনে করেন, ভাষা শেখার সফলতার ক্ষেত্রে নতুন ভাষার মধ্যে ডুবে যাওয়ার বা গভীরভাবে অনুভব করার চেয়ে বড় কিছু আর নেই। অর্থাৎ নতুন ভাষার খুব কাছাকাছি বা সংস্পর্শে না এলে সেটি শেখা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জন বেশিরভাগ মানুষেরেই কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। তবে যে ভাষাই হোক না কেন, সেটির প্রতি ভালোবাসা না থাকলে বা সেটিকে নিজের জীবনের অংশ হিসেবে না দেখা হলে তা শেখা কঠিন হয়ে পড়ে।

ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের মতে, একজন মানুষের স্বাভাবিক সক্ষমতা, ভাষাগত অভিজ্ঞতা এবং শেখার ধারাবাহিকতা ভাষা শিক্ষার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মাতৃভাষার কাছাকাছি ধরনের ভাষা শিখতে তুলনামূলক কম সময় লাগে। যেমন একজন ইংরেজি ভাষাভাষীর স্প্যানিশ বা ফ্রেঞ্চ শিখতে ২৪ থেকে ৩০ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে, একদম বিপরীতধর্মী সংস্কৃতির ভাষা যেমন গ্রিক বা রুশ ভাষা শিখতে ৪৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ও লাগতে পারে। কঠিন ভাষা হিসেবে পরিচিত আরবি বা ম্যান্ডারিন শিখতে এর দ্বিগুণ সময় লেগে যেতে পারে।

এসব সময় হিসাব করা হয়েছে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নতুন ভাষা শেখার জন্য দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে। তবে নতুন ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য সেটির পেছনে আপনাকে নিয়মিত সময় দিতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই।

বর্তমানে অনেক বয়স্ক মানুষই তার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে কিংবা সামাজিক জীবনকে আরেকটু উন্নত করতে নতুন ভাষা শেখার দিকে ঝুঁকছেন।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোয়াজ কিসার মনে করেন, জ্ঞানের বিকাশে দ্বিভাষিক হওয়ার দারুণ সব সুবিধা রয়েছে। কারণ যত নতুন ভাষা আপনি শিখবেন তত বুঝতে পারবেন যে ভাষা আমাদের জীবনের কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বেশি বয়সীদের জন্য নতুন ভাষা শেখার সুবিধা হলো স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং শব্দভাণ্ডার বড় হওয়া। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে নতুন ভাষা শিক্ষা ডিমেনশিয়াও প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। ভাষা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নানানভাবে চিন্তা করতে শেখায় বলেও মনে করেন অধ্যাপক কিসার।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বহুভাষিকরা যেকোনো দৃষ্টিভঙ্গী খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারেন। সামাজিক নেটওয়ার্ক প্রসারের ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে থাকেন।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

গ্রন্থনা: শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Patent waiver till Nov 2026: Local pharmas may miss window for 15 costly drugs

Bangladesh’s pharmaceutical companies risk losing the chance to produce at least 15 costly biologic drugs royalty-free

8h ago