পথেঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি—আইনে যা আছে
রাস্তায় ও বাড়িঘরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সময় তল্লাশি চালান।
সেক্ষেত্রে তল্লাশির নিয়ম কী, আইন কী বলে এবং তল্লাশির সময় নাগরিক হিসেবে অধিকার কী—এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা।
তল্লাশির নিয়ম কী, আইন কী বলে
ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা বলেন, রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় আমরা অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর তল্লাশির মুখোমুখি হয়েছি। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দিষ্ট কিছু আইনের অধীনে তল্লাশি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে সব ধরনের তল্লাশি শর্তসাপেক্ষে এবং যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ভিত্তিতে করতে হবে।
আমাদের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে অবৈধ তল্লাশির বিরুদ্ধে নাগরিকের বাসগৃহ ও চিঠিপত্রের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তবে এই অধিকারটি শর্তসাপেক্ষ। জনস্বাস্থ্য, নৈতিকতা ও জননিরাপত্তার স্বার্থে, নাগরিকের বাড়ি-ঘরে প্রবেশ, তল্লাশি ও জিনিসপত্র জব্দ করা যাবে।
ফৌজদারি কার্যবিধিতে তল্লাশির ওপরে একটি বিস্তৃত অংশ রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুসারে—পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে ওয়ারেন্ট বা পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে, যদি তার বিরুদ্ধে যৌক্তিক সন্দেহ থাকে যে তিনি কোনো অপরাধ করেছেন বা করতে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের আগে বা পরে তল্লাশি করতে হলে তা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ভিত্তিতে করতে হবে।
যদি কোনো পুলিশ অফিসার বিশ্বাস করেন যে কোনো স্থানে বা ব্যক্তির কাছে অপরাধের প্রমাণ, চুরি যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র বা অপরাধে ব্যবহৃত বস্তু রয়েছে, তাহলে তিনি তা তল্লাশি করতে পারেন এবং প্রয়োজনে জব্দ করতে পারেন। শর্ত থাকে যে জব্দ তালিকা থাকতে হবে এবং সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তল্লাশি চালাতে হবে।
ম্যাজিস্ট্রেটের জারি করা সার্চ ওয়ারেন্ট বা তল্লাশি পরোয়ানা নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে তল্লাশি চালানো হয়। যদি তল্লাশি পরোয়ানা পাওয়া সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার নিজের দায়িত্বে তল্লাশি করতে পারেন এবং পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে।
ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ২০ অনুচ্ছেদের উদাহরণ দেন। তা অনুসারে একজন পুলিশ অফিসার রাস্তায় অথবা পাবলিক প্লেসে একজন নাগরিককে তল্লাশি করতে পারেন। তবে তল্লাশির কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন: পুলিশ যদি সরল বিশ্বাসে মনে করে যে, কোনো ব্যক্তির কাছে চোরাই মালামাল রয়েছে, তাহলে সেই ব্যক্তিকে তল্লাশি করা যাবে। মালামাল উদ্ধার হলে, তা পরীক্ষা করে দেখা যাবে।
নাগরিকের স্বার্থ রক্ষার্থে একই আইনের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো অফিসার যদি আইনগত কর্তৃত্ব অথবা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কারো বাড়িঘর, যানবাহনে তল্লাশি চালান, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ তল্লাশির যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে।
কেন আমাকে তল্লাশি করা হচ্ছে?
নাগরিক অধিকার হিসেবে কেন আমাকে তল্লাশি করা হচ্ছে এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার অধিকার নাগরিকের রয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট অফিসারের নাম ও পদবি জানতে চাইতে পারেন। তল্লাশির সময় অবশ্যই সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। তল্লাশির সময় যেন অযথা শরীর স্পর্শ বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি ঘাটাঘাটি বা নষ্ট না করা হয় সে বিষয়ে যত্নশীল হওয়া আবশ্যক।
যদি কোনো পুলিশ অবৈধভাবে বা অকারণে তল্লাশি করেন, তবে সেটিও একটি অপরাধ। অবৈধ তল্লাশি অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশের জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।


Comments