ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য শনাক্ত করতে যেভাবে বাবা-মাকে সহায়তা করবেন

ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্য শনাক্ত
ছবি: অর্কিড চাকমা

বড় হওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মা-বাবার দায়িত্ব নেওয়া। তবে এই ডিজিটাল যুগে এসে তাদের যত্ন নেওয়ার অর্থ কেবল সুস্থতা নিশ্চিত করা নয়। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে পরিচিত ভুয়া তথ্য পাওয়া থেকে তাদের রক্ষা করাও এখন বড় দায়িত্ব।

বেশিরভাগ মা-বাবাই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। ফলে তারাও আমাদের সবার মতো অপতথ্য বা ভুয়া তথ্যভিত্তিক কন্টেন্টের মুখোমুখি হচ্ছেন। পার্থক্যটা হলো, তরুণরা বা আমরা ভুল তথ্য চিনতে পারি কিংবা কোনো তথ্যে সন্দেহ হলে সেটা যাচাই করতে পারি। কিন্তু বয়স্করা বা মা-বাবারা এমন সময়ের প্রতিনিধিত্ব করেন যেখানে মুদ্রিত যেকোনো শব্দকেই বিশ্বাসযোগ্য ধরা হতো। তাদের সময় যদি কোনো তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো, তাহলে সেটি সত্যই হতো। কিন্তু ইন্টারনেটের জগতে সবসময় বিষয়টি এমন নয়।

এখানে যে কেউ কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যালগরিদমে কোন কন্টেন্টটি অগ্রাধিকার পাবে বা ওপরে উঠে আসবে তা এর নির্ভুলতার ওপর নির্ভর করে না। বরং নির্ভর করে কত মানুষ এটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তার ওপর। ভুল তথ্যে থাকা অতিরিক্ত আবেগ, ক্রোধ এবং স্মৃতিকাতরতা এটিকে সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছতে সাহায্য করে।

ভুল তথ্য পাওয়ার বিষয়টি এতটাই চ্যালেঞ্জিং যে, অনলাইনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন এমন অনেক মানুষের জন্যও সত্য ও কল্পকাহিনীর মধ্যে পার্থক্য করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। আর বয়স্কদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ আরও বেশি, কারণ তাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে তাদেরকে সহজে বিভ্রান্ত করা যায় না। ফলে যখন তাদের কোনো ভুল তথ্য সম্পর্কে জানানো হয় বা বলা হয় যে তথ্যটি মিথ্যা; তখন উল্টো তারা সেটি বিশ্বাস করার পরিবর্তে নিজের বিশ্বাসের ব্যাপারে আত্মরক্ষামূলক আচরণ করেন।

তাই তাদের বিশ্বাসকে সরাসরি উড়িয়ে দেওয়ার বদলে এক্ষেত্রে কার্যকর পদ্ধতি হলো, তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়া। আমরা অনেকেই মনে করি যে বাবা-মায়েরা প্রযুক্তি কম বোঝেন। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন, তাদের বেশিরভাগই আশ্চর্যজনকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। তাই এখন তাদের যেটা সবচেয়ে জরুরি ভিত্তিতে শেখাতে হবে, সেটা হলো নির্ভরযোগ্য সংবাদ উৎস ব্যবহার করে তথ্য যাচাই করা।

তাদের বলতে হবে, যদি কোনো তথ্য সঠিক হয় তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটি দেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশ পাবে। তাই সামাজিক মাধ্যমে কোনো তথ্য পেলেই সেটি অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে এবং সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সবার সঙ্গে শেয়ার না করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা ভালো। অনেক বয়স্ক ব্যক্তি আছেন যারা নিজেদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো তথ্য খুব সহজেই বিশ্বাস করেন। সেক্ষেত্রে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে নিরপেক্ষ ও তথ্য-ভিত্তিক উৎসের সঙ্গে। যেটা সামাজিক মাধ্যম এবং প্রথাগত সংবাদমাধ্যম দুটোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যাতে তারা পক্ষপাতদুষ্ট বর্ণনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন, অ্যালগরিদমের কারণে আপনার বাবা-মায়ের সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য পাওয়ার হার আপনার চেয়ে বেশি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ধরুন, যদি আপনার বাবা-মা ফেসবুক বা ইউটিউবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কোনো ভিডিও দেখেন, তাহলে তাদের ফিডে এ সংক্রান্ত কন্টেন্টই বেশি আসবে।

বাবা-মাকে ভুল তথ্যের হাত থেকে বাঁচানোর অন্যতম উপায় হলো তারা যে ধরনের পেইজে লাইক দিচ্ছেন বা কোন ধরনের গ্রুপে সদস্য হয়েছেন তার ওপর নজরদারি করা। ভুল তথ্য ছড়ায় এমন পেজগুলো হাইড করে দেওয়া, অহেতুক অপতথ্য দেয় এমন গ্রুপ লিভ করা। এতে মিথ্যা বা ভুল তথ্য পাওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। অভিভাবকদের বোঝাতে হবে যে, তাদের সামাজিক মাধ্যমের ফিডে যেসব তথ্য আসছে সেগুলোর সঙ্গে তাদের অতীতের মিথস্ক্রিয়ার একটা সম্পর্ক আছে। তারা যদি বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে তথ্য নেন তাহলে ফিডও ভারসাম্যপূর্ণ হবে। যেহেতু তারা একটি নতুন ক্ষেত্রে বিচরণ করছেন তাই তাদের উচিত ভুল তথ্য থেকে বাঁচতে ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার বদলে নির্ভুল তথ্য পাওয়ার বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানো।

বাবা-মায়ের সামাজিক মাধ্যমের প্রতিটি পদক্ষেপে তথ্য যাচাইকারী হিসেবে না থেকে আমাদের উচিত তাদের স্বাধীনভাবে তথ্য যাচাইয়ে সক্ষম করে গড়ে তোলা। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভুল তথ্য নতুন নতুন কারসাজির শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। জনমতকে প্রভাবিত করতে বা গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে বা দেশে অস্থিরতা তৈরির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অভিভাবকরা যেন সতর্কতার সঙ্গে এই ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারেন তা নিশ্চিত করা কেবল আমাদের ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, বরং সচেতন সমাজ গড়ে তোলার জন্য অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Blood Moon 2025: Dhaka witnesses total lunar eclipse

Astronomy enthusiasts and skywatchers gathered on rooftops and open spaces to witness the rare spectacle

5h ago