সম্পর্কে কখন বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করবেন?

সম্পর্কে বিয়ের বিষয়ে আলোচনা
ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই একটি কথা আমরা বইয়ে পড়ছি, বড়দের কাছে শুনে আসছি—মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় হিসেবে বিয়ে বহুকাল ধরেই প্রচলিত একটি প্রথা। বিষয়টি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে বিয়ের বয়স বলে আলাদা একটি ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে।

মেয়েদের বা ছেলেদের বিয়ের বয়স আইনিভাবে একটা, আর সামাজিকভাবে একটা। তাইতো 'কুড়িতে বুড়ি' হওয়ার দিন পেরোলেও বিয়েকে এখনো জীবনের একটি মাইলফলক হিসেবে দেখেন অনেকেই।

কিন্তু লোকের কথা তো ভিন্ন, সবার আগে আসে নিজের ও নিজেদের কথা। একটি প্রেমঘটিত সম্পর্কে থাকা অবস্থায় ঠিক কখন বুঝবেন, এই মানুষটিকেই বিয়ে করতে চান কিংবা আপনি বিয়ের জন্য প্রস্তুত? নিশ্চয়ই এর জন্য কোনো টিকচিহ্নে ভরপুর চেকলিস্ট হাজির হবে না, তবে কিছু ইশারা-ইঙ্গিত আপনি নিজের কাছেই পেয়ে যাবেন, তাতে সন্দেহ নেই। আর নিজের মন সায় দিলে অন্য পক্ষের কাছে তা উপস্থাপনের জন্য কোন সময়টি বেছে নেওয়া যায়, তা বুঝতে হলে নজর দেওয়া দরকার কিছু বিষয়ের দিকে—

সম্পর্কে স্থিরতা

স্থিরতা আর স্থবিরতা কিন্তু এক নয়। একটি সম্পর্ক যখন স্থির হবে, তখন দুটো মানুষের কেউই থেমে থাকবে না, কিন্তু কোনো টালমাটাল সময় বা পরিস্থিতির মধ্যেও তারা একসঙ্গে স্থির থাকতে শিখবে। আর এই স্থিরতাই সেই মাইলফলক, যখন দুজন মানুষ সামাজিক রীতিনীতি মেনে একসঙ্গে ঘর বাঁধতে চায়। সেই ঘর নিয়ে জল্পনা-কল্পনা আর পরিকল্পনা যখন এগোতে থাকে, তখন তারা আরও নিশ্চিত হয়ে ওঠে—এ বেলাই গোধূলীলগ্নে গাঁটছড়া বাঁধবার সময়।

বোঝাপড়ায় স্বচ্ছতা

দুজন মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক তিল তিল করে গড়ে ওঠে, তাতে বাকি জগতের ভূমিকা থাকলেও কোনো না কোনোভাবে তারা বাকি সবার চাইতে আলাদাভাবেই নিজেদেরকে তৈরি করে। এই তৈরি হওয়ার সময়টিতে একে অপরের সঙ্গে সর্বোচ্চ স্বচ্ছ যদি থাকতে পারে, তবে বিয়ের ভাবা যায় এবং কথাটি সঙ্গীর কাছে তোলা যায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

একটি নির্দিষ্ট সময় একসঙ্গে যাপনের পর যখন দুজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একই পথে চলছে বলে মনে হয়, বিয়েতে আগ্রহী লোকজন সে সময়টিকে বেছে নিতে পারেন। কেননা আমরা সকলেই বর্তমানে বাঁচি ভবিষ্যতের একটি পথনকশা নিয়ে। পুরোপুরি পরিকল্পনা না করা থাকলেও অন্তত ধাঁচটা অনুধাবন করা যায়। ধরা যাক, একজন একেবারেই ঘরকুনো মানুষ, তিনি কখনোই কোথাও যেতে চান না—তার সঙ্গে পুরোপুরি যাযাবর, ঘুরে বেড়ানো লোকের বিয়ে করতে চাওয়াটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী নাও মিলতে পারে। কেননা এতে করে একসঙ্গে এক ছাদের নিচে বেশি সময় কাটানোটা সম্ভব হবে না, আর 'বিয়ে' বলতে আমরা তো সর্বাগ্রে এই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিই।

পারিবারিক সামঞ্জস্য

আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে পারিবারিক বন্ধন অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। আর তাই বিয়ে দুটি মানুষের হলেও সম্পর্কটা গড়ায় দুটো পরিবারের মধ্যে। তাই পারিবারিক আবহ, ধরন-ধারণ, চাহিদা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখেই লোকে বিয়ের কথা ভাবে। বিয়ের পরবর্তী সময়ে সঙ্গীর সঙ্গে জীবনে তার পরিবারের লোকজনের সম্পর্ক কেমন হতে পারে, তা ইতিবাচক না নেতিবাচক হবে—এমন একটা ছক কষে নিয়েই সাধারণত এগোনো হয়। অনেকেই অবশ্য সে সামঞ্জস্যকে মাথায় না রেখে শুধু দুজনের সম্পর্কটায় বেশি জোর দেন, তবে প্রথাগতভাবে পরিবার এখানে একটি ভূমিকা রাখে। তাই দুই পরিবার যদি রাজি হয়, তবে কাজি ডেকে আনতে বেশি দেরি না করলেও চলে।

দুজনে একইভাবে ভাবছেন তো?

এই প্রশ্নটি বোধহয় অন্য সব মাপকাঠির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উপরের একটিও যদি বিষয় আপনার সঙ্গে না মেলে, কিন্তু এই প্রশ্নটির উত্তর ইতিবাচক হয়—তবে হ্যাঁ, আপনারা চাইলে এখনই বিয়ের আলাপে যেতে পারেন। কেননা লোকের ভাবনার বাইরে, অন্যের প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্নভাবে হলে একটি রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে দুজন ব্যক্তি যদি একইভাবে ভাবতে পারে, তবে সেখানে অন্য কোনোকিছুই বাধা হতে পারবে না।

তাই সবার আগে খেয়াল করুন নিজের সঙ্গীটিকে। তিনি বিয়ে নিয়ে আদতে কী ভাবেন, এই সম্পর্ক নিয়ে তিনি কতটুক এগোতে রাজি—আপনাদের একত্র যাপনে দুজনেই একইরকম স্বচ্ছন্দ কি না, এসব ভেবে ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু একটি বিন্দুতে স্থির হলে, এখনই সময়। একটি সুন্দর বৃষ্টিভেজা বিকেল কিংবা সূর্যাস্তের পাহাড়ে, সমুদ্রের ফেনিল ঢেউয়ে অথবা একেবারেই নিজস্ব পছন্দের সময় ও জায়গায় বলেই বসুন আপনার প্রিয়জনকে মনের কথাটি, আরও একবার নতুন করে।

Comments

The Daily Star  | English
Sharif Osman Hadi dies in Singapore

Sharif Osman Hadi no more

Inqilab Moncho spokesperson dies in Singapore hospital

12h ago