ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের বিশেষ যত্ন কেন প্রয়োজন, কীভাবে নেবেন

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন
ছবি: সংগৃহীত

ডায়াবেটিস রোগীর পা অত্যন্ত সংবেদনশীল, সেখানে যেকোনো ক্ষত ও সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন সম্পর্কে জেনে নিন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের পুষ্টি, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক ডিজিজ কনসালটেন্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপুর কাছ থেকে।

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যত্ন প্রয়োজন কেন

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকে বলে তাদের স্নায়ু ও রক্তনালীর ক্ষতি হয়। তাই এই ধরনের রোগীর পায়ের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন হয়, নয়তো বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

যেসব কারণে পায়ে সমস্যা হয়

১. পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি: স্নায়বিক ক্ষতি পায়ের স্নায়ু অনুভূতির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণে তারা তাদের পায়ে ব্যথা বা চাপ অনুভব করতে পারেন না। এর ফলে ছোটখাট ক্ষত, ফোসকা বা আঘাতের ব্যাপারে তারা সচেতন হতে পারেন না, যেটা পরে বড় ক্ষতে পরিণত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবাণু আক্রান্ত হয়।

২. পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ: ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তনালী ব্লক হয়ে রক্ত-সঞ্চালন কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ফলে যেকোনো ক্ষত দ্রুত সারে না।

৩. হাইপারগ্লাইসেমিয়া: রক্তে অতিরিক্ত শর্করার উপস্থিতিও যেকোনো ক্ষত দ্রুত সারাতে বাধা সৃষ্টি করে।

ডায়াবেটিস আছে যাদের তারা পায়ের যত্ন না নিলে বা খেয়াল না রাখলে তাই বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। পায়ে ক্ষত ও সংক্রমণ হতে পারে, ছোট ক্ষত বড় আকার ধারণ করতে পারে এবং সংক্রমণ হতে পারে। পায়ে ঘা বা আলসার হতে পারে, যা গুরুতর হতে পারে। এ ছাড়া গ্যাংগ্রিন হওয়ার ঝুঁকি থাকে, পায়ের টিস্যু নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার ফলে পা কেটে ফেলতেও হতে পারে।

কাদের ঝুঁকি বেশি

দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি। যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না, যারা ধূমপানকারী এবং উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল আছে যাদের, স্থূলকায় বা শরীরের ওজন বেশি যাদের, তাদের ঝুঁকি বেশি ।

পায়ের যত্নে কী করবেন

১. ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন পা পরীক্ষা করতে হবে। পা সবসময় পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে।

২. নরম, আরামদায়ক ও সঠিক মাপের জুতা পরতে হবে।

৩. পায়ের নখ নিয়মিত কাটতে ও পরিচর্যা করতে হবে। কোণা করে ও বেশি ছোট করে নখ কাটা উচিত নয়। এতে নখের কোণার মাধ্যমে ক্ষত তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

৪. কুসুম গরম পানিতে পা ধুতে হবে। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না।

৫. পায়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। তবে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ব্যবহার করা উচিত নয়।

৬. পায়ের ত্বকে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না তা খেয়াল করতে হবে এবং কোনো ক্ষত বা সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, ডায়াবেটিস/মেডিসিন ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করা উচিত ডায়াবেটিস রোগীদের। চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পায়ে ক্ষত হলে পরিষ্কার ও ড্রেসিং করাতে হবে, সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করতে হবে। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনে সার্জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে পায়ের আলসারের চিকিৎসা বা গ্যাংগ্রিন হলে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হবে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের পায়ের যত্নের প্রতি সচেতন থাকতে হবে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।

 

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

15h ago