বই দিবস

নিঃসঙ্গ জীবনে সঙ্গী যখন বই

দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য বইগুলোর মাঝে বসে আছেন মাহমুদ শাহ কোরেশী। ছবি: স্টার

'শিক্ষা-সংস্কৃতি অঙ্গনের বন্ধুদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন। ছেলেমেয়েরা থাকেন বিদেশে। বয়সের কারণে চলাচলও সীমিত হয়ে গেছে। নতুন বই-সাময়িকী-দৈনিক পত্রিকাও সেভাবে পড়তে পারি না। তবুও হাজারো স্মৃতির মাঝে এই নিঃসঙ্গ জীবনে আমার সঙ্গী এখন বই।'

কথাগুলো বলছিলেন অধ্যাপক মাহমুদ শাহ কোরেশী। এই খ্যাতিমান গবেষক ও শিক্ষাবিদ শিক্ষকতা করেছেন দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে; গড়ে তুলেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইবিএস।

গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ফ্রান্সে তিনি গবেষণা করেছিলেন সেই সময়ে স্বল্প পরিচিত বাঙালি মুসলমানের বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান নিয়ে। তিনি অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে; সান্নিধ্য পেয়েছিলেন দেশি-বিদেশি বরেণ্য মানুষের; দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে।

বিশ্ব বই দিবস উপলক্ষে কথা হয় তার ধানমন্ডির বাসা 'আশায় বসতি'তে। গেট থেকে খবর পাঠাতেই এসে ভেতরে নিয়ে যান। খানিক বিরতি নিয়ে 'কেমন আছেন' দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য বইগুলোর মাঝে বসে প্রশ্ন করতেই এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন। তারপর গল্পে গল্পে বলেন জীবনের নানা অজানা কাহিনী।

তার সঙ্গে আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ছিল বই। এই গবেষক বই প্রসঙ্গে বলেন, 'বই আর শিক্ষকতায় জীবন কেটে গেছে আমার। এখন চাইলেও অনেক বই পড়তে পারি না।' 

জানিয়েছেন মা বাবা থেকে প্রাথমিকভাবে বই পাঠের প্রেরণা। পত্রালাপে প্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের। দূর থেকে দেখেছেন মাহবুবুল আলম চৌধুরীকে। পরে ক্লাসে পেয়েছেন তাঁকে।

বইয়ের মানুষের মাঝে কলেজ ও  বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন অধ্যাপক আবুল ফজল, মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, মযহারুল ইসলাম, কাজী দীন মোহাম্মদ, এ কে এম আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবদুল হাই ও নীলিমা ইব্রাহিমের মতো মনীষীদের। সহপাঠী হিসেবে পেয়েছেন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও গীতিকার আবদুল গাফফার চৌধুরী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জহির রায়হান, নেয়ামাল বশীরসহ অনেকেই। যারা কেউ এখন আর বেঁচে নেই।

বাংলা একাডেমির দায়িত্ব পালনের সময় দেখা হয়েছে বহু মানুষের সঙ্গে। বিশেষ করে সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আল মাহমুদের সঙ্গে রয়েছে অসামান্য স্মৃতি।

'তারা কেউ বেঁচে নেই। রয়েছে তাদের সঙ্গে কাটানো স্মৃতি ও বই। এর মাঝে আমি যাপন করছি অব্যক্ত বেদনার জীবন। মাসেও একজন কবি লেখকের দেখা পাই না,' আক্ষেপের সুরে বলেন এই অধ্যাপক।

মাহমুদ শাহ কোরেশী ১৯৩৬ সালের ১২ অক্টোবরে জন্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া। বাবা রফিক আমেদ কোরেশী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।  

খারাপ লাগার মধ্যে রয়েছে তার বইগুলো বাজার পাওয়া না যাওয়া। একে তিনি প্রচার ও প্রকাশক ভাগ্য খারাপ বলে অভিহিত করেন। তার প্রায় পঞ্চাশের অধিক বইয়ের একটিও বাজারে পাওয়া যায় না।

১৯৭০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের কন্যা সৈয়দা কমর জাবীন নাসরিনকে বিয়ে করেন। তারপর থেকে সৈয়দ আলী আহসানের কীর্তি ছড়িয়ে দেওয়ায় ভূমিকা রাখেন। 

প্যারিসে থাকাকালে দার্শনিক ও লেখক অঁদ্রে মালরো ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। সেসব সুখস্মৃতি তার আনন্দ অর্জন।

নব্বই বছর বয়সী এই গুণীর খারাপ লাগার মধ্যে রয়েছে তার বইগুলো বাজার পাওয়া না যাওয়া। একে তিনি প্রচার ও প্রকাশক ভাগ্য খারাপ বলে অভিহিত করেন। তার প্রায় পঞ্চাশের অধিক বইয়ের একটিও বাজারে পাওয়া যায় না।

ভাষা ও সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য ফরাসী সরকার কর্তৃক একাধিক পুরস্কার ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত হন। ফরাসী, ইংরেজি ও বাংলা সব ভাষাতেই তিনি সাবলীল এবং বহু গল্প, অনুবাদ, গবেষণা ও সম্পাদিত গ্রন্থ-পুস্তক তিনি রচনা করেন।

এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, অঁদ্রে মালরো: শতাব্দীর কিংবদন্তি, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার সমস্যা, ফ্রান্সে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমাদর, সৈয়দ আলী আহসান ও বিশ্ব সংস্কৃতি, রবীন্দ্রনাথ ও ফরাশি সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের মিশন ও আমার জীবন ও ফরাশি ভাষা ও সাহিত্য ইত্যাদি।

সর্বশেষ রচনা হিসেবে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে 'প্যারিসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ও প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ' বইটি। আগামী মাসে প্রকাশ হবার কথা রয়েছে। 

Comments

The Daily Star  | English

Pori Moni clinches Best Actor Female (Popular) for ‘Rongila Kitab’

Directed by Anam Biswas, the Hoichoi original series premiered in late 2024 and follows the turbulent journey of Supti, a pregnant woman forced to flee with her husband after being falsely accused of a crime

23m ago