হকার উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষ: অভিযোগপত্রে নারাজি মেয়র আইভীর

নারায়গঞ্জের হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে এমপি শামীম ওসমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে মেয়র আইভীসহ ৩০ জন আহত হন। চাষাঢ়া, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮। ছবি: সংগৃহীত

ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি জানিয়েছেন বাদীপক্ষ। আজ রোববার দুপুরে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালতে নারাজি আবেদন দেন।

হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মেয়র আইভীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আইভীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর শামীম ওসমানের অনুসারীদের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় অভিযোগ দেন সিটি মেয়র। অভিযোগটি প্রথমে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করা হলেও ঘটনার ২২ মাস পর আদালতের নির্দেশে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ। মামলায় শামীম ওসমানের অনুসারী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৯০০-১০০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। দীর্ঘসময় তদন্ত শেষে গত ২৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ভিডিও ফুটেজে পিস্তল জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেলেও আসামি জামিনে থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় অস্ত্রটি উদ্ধার করা যায়নি। অপরজনের অস্ত্রটি তার নামে লাইসেন্স করা। এ কারণে তাদের অস্ত্র আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

হকার উছেদকে কেন্দ্র করে নারায়গণগঞ্জে আইভী ও শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ। স্টার ফাইল ছবি

অস্ত্র আইনের ধারা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ায় নারাজি দেবেন বলে জানিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার বলেন, 'হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে অস্ত্র দেখা গেছে। সবাই তা দেখেছে। অথচ আসামিদের অস্ত্র আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এজাহারভুক্ত কয়েকজন আসামিকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আমরা নারাজির আবেদন জমা দিয়েছি। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। এই বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী ১ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেছেন।'

অস্ত্র আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি দিলেও হত্যাচেষ্টা, জখম, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে পেনাল কোডের একাধিক ধারায় ১২ জনকে আসামি করেছে পিবিআই। এজাহারে থাকা আসামির তালিকা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ৭ জন।

অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান, হকার নেতা রহিম মুন্সি, আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ, সায়মন, ইকবাল হোসেন, মাসুদ পাটোয়ারী ওরফে শুক্কুর, তোফাজ্জল, পলাশ মিয়া, মহসীন বেপারী, সালাউদ্দিন ওরফে সালাউদ্দিন গাজী এবং সাদেকুল ইসলামকে। এদের মধ্যে কেবল শাহ নিজাম ও নিয়াজুল ইসলাম খান এজাহারভুক্ত আসামি। বাকিরা এজাহার বহির্ভূত আসামি।

আসামিরা সবাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বলে জানিয়েছে মামলার বাদীপক্ষ।

এজাহারভুক্ত আসামি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগকর্মী নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির ও চঞ্চল মাহমুদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছে পিবিআই। তাদের মধ্যে মিজানুর রহমান সুজন গত বছরের ৯ জানুয়ারি মারা গেছেন।

মামলার বাদী জিএম সাত্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়র আইভী শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত করার উদ্যোগ নিলে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান হকারদের পক্ষে অবস্থান নেন। তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত করে দিতে নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। হকাররা ফুটপাত না ছাড়ায় মেয়র আইভী শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে চাষাঢ়ার সায়াম প্লাজার সামনে এলে হামলার শিকার হন। এসময় এক নম্বর আসামি নিয়াজুল ইসলাম খান ও দুই নম্বর আসামি শাহ নিজামসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা গুলি করেন। মেয়র আইভীকে মানবঢাল তৈরি করে রক্ষা করা হয়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

July charter implementation: Commission races against time to find out ways

Consensus Commission has yet to find a viable mechanism to ensure that the proposed constitutional reforms under the July charter will be implemented

9h ago