পিলখানা হত্যাকাণ্ড

মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ১৩৯ আবেদন এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন

supreme-court_0_1.jpg
সুপ্রিম কোর্ট ভবন। স্টার ফাইল ছবি

পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদরদপ্তরে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় এখনো কার্যকর করা যায়নি। কারণ, তাদের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আবেদন এখনো সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তি হয়নি।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

বিডিআর সদর দপ্তরে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে হতবাক হয়েছিল দেশের আপামর জনগণ। এই ঘটনার পরে বিডিআরের নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়।

২০১৭ সালের নভেম্বরে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদন এখনো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

করোনা মহামারির পর সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলার সংখ্যা আরও বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায়। সেই কারণেই বিডিআর বিদ্রোহের মামলার এই দীর্ঘসূত্রিতা। আপিল বিভাগ এখনো সেই আবেদনের শুনানিই শুরু করেনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধান বিচারপতি আপিল শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চ গঠন করলে আপিল বিভাগ শুনানি শুরু করবে।'

'আপিল বিভাগের অন্তত ৪ জন বিচারকের সমন্বয়ে বেঞ্চ গঠন করতে হবে। ৩ বিচারপতিকে নিয়ে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়, যা মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তির রায় দেয়', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মাত্র ৮ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের ৩টি পৃথক বেঞ্চ বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি করছে। বর্তমানে ৩টি বেঞ্চ কাজ করায় আপিল বিভাগে মামলার জট কমছে।'

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'আমি আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে আপিল বিভাগে চলমান মামলার সংখ্যা কমে আসবে এবং এরপর প্রধান বিচারপতি বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আপিল শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করবেন।'

'তবে আপিলের শুনানি শেষ হতে কত সময় লাগবে, তা আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না', বলেন তিনি।

একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮ এর অধীনে দায়ের করা আরেকটি মামলায় বিচারিক আদালত সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়াও এখনো শেষ করতে পারেনি।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত এখন ওই মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করছেন। আশা করছি এ বছরের মধ্যেই এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।'

বিডিআর হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, 'আপিল বিভাগ কখন আপিল শুনানি শুরু করবে, তা প্রধান বিচারপতির ওপর নির্ভর করছে। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে বিচারিক আদালত এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮০ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে।'

আসামিদের পক্ষে মোট ৪৯টি আপিল করা হয়েছে।

এর মধ্যে ২৬টি আপিল করেন দণ্ডিত ৫৩ জন আসামি। বিডিআর হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৫১ আসামির পক্ষে বাকিগুলো করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'হাইকোর্টের ৮৩ জনকে খালাস দেওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০টি আপিল করেছে।'

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, 'প্রায় ৫০০ আসামি, যারা ইতোমধ্যে কারাদণ্ড ভোগ করেছেন এবং বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়েছেন, তারা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না।'

'আদালতকে অনেক সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করার প্রয়োজন নাও হতে পারে', বলেন তিনি।

বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলার বিচারকাজ শেষ করতে ১ বছরেরও বেশি সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh's surveillance system

Draft law forbids unlawful surveillance

The government has drafted a new ordinance that seeks to penalise unauthorised surveillance by anyone, including state actors.

9h ago