‘সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হলে মুক্তিও পেতে পারেন’

ট্রাইব্যুনালে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। স্টার ফাইল ফটো

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দোষ স্বীকার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাজসাক্ষী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দোষ স্বীকার করে সাক্ষী হলে তাকে আদালত দণ্ডিত করতে পারে, তবে তাকে শাস্তি না দিয়ে মুক্তিও দেওয়া হতে পারে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইন অনুযায়ী যে আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে এবং মামলার সত্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করতে রাজি হয়, তাকে রাজসাক্ষী বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই সাক্ষীদের দণ্ডিত করা হলেও তাদের মুক্তি দেওয়া হয়ে থাকে।'

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন অন্যতম আসামি। এ মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি আবদুল্লাহ আল মামুন। আজ বুধবার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরও করা হয়।

আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাঁচটি নির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন এবং নির্দেশদাতা হিসেবে দায়। অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর আদালত মামুনকে প্রশ্ন করলে তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং পুরো ঘটনা প্রকাশে সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, 'আমি আদালতের কাছে সত্য উদঘাটনে সাহায্য করতে চাই এবং যা কিছু জানি, সব খুলে বলতে প্রস্তুত। আমি রাজসাক্ষী হতে চাই।'

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান জানান, আদালত তার এই আবেদন বিবেচনায় নেবে।

আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগের পর প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'মামুন আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন এবং সাক্ষী হতে চেয়েছেন। যেহেতু তিনি জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সময় দায়িত্বে ছিলেন, তাই তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। আদালত তার আবেদন গ্রহণ করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'যথাযথ সময়ে তিনি (মামুন) আদালতে সাক্ষ্য দেবেন এবং কারা এই অপরাধে জড়িত ছিলেন, তা প্রকাশ করবেন।'

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, 'হ্যাঁ, মামুন এখন রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হবেন, তবে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারেই রাখা হবে।'

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩–এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করে কোনো ব্যক্তি যিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা অবগত, তার কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য তাকে ক্ষমা প্রদানের প্রস্তাব দিতে পারে, এই শর্তে যে তিনি ওই অপরাধ এবং অপরাধে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির (প্রধান অথবা সহায়ক হিসেবে) বিষয়ে তার জ্ঞাত সব তথ্য সম্পূর্ণ ও সত্যভাবে প্রকাশ করবেন।

এই ধারার অধীনে ক্ষমা পাওয়া ব্যক্তিকে বিচার চলাকালে সাক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে হেফাজতে রাখা হবে।

এখন দেখার বিষয় মামলার অগ্রগতিতে সাবেক আইজিপির এই স্বীকারোক্তি এবং সাক্ষ্য বিচারের ক্ষেত্রে কতটা সাহায্য করে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কোন দিকে যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Cyber Security Agency urges media not to run convicted fugitive Hasina's statements

Airing such statements is a violation of Cyber Security Ordinance 2025, it says

6h ago