৫-১৫ আগস্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও তদন্তের সুপারিশ জাতিসংঘের

গত বছর ৫ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর দ্রুত ও স্বাধীন তদন্তের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এই ঘটনাগুলো ঘটেছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) তাদের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করেছে। গতকাল প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম: '২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে বিক্ষোভ সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন'।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ আগস্টের পরের ঘটনা অনুসন্ধানের আওতায় না পড়লেও, ওএইচসিএইচআর এ ধরনের সব ঘটনার দ্রুত ও স্বাধীন তদন্তের জোর সুপারিশ করেছে। এই সময়ে বাংলাদেশে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ঘটনার বিচার না হলে দেশের সামাজিক কাঠামো, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ সংহতির জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে বহু থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৪৫০টিতে ভাঙচুর বা হামলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান বা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। আবার কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে বা অন্যভাবে হত্যা করা হয়।

৫ আগস্টের পর থেকে উন্মত্ত জনতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের কার্যালয়গুলোতে হামলা চালায়। ওএইচসিএইচআর যেসব তথ্য পেয়েছে সেই অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা এসব হামলায় জড়িত ছিল। সংক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি কর্মকর্তা বা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু হিন্দু, আহমদীয়া সম্প্রদায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন উদ্দেশ্য থেকে তাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং উপাসনালয়েও হামলা চালানো হয়েছে। সরকারে বিশৃঙ্খলা থাকায় তাদের মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

হাসিনার পতনের পর পুলিশের অনেক সদস্য কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশি অভিযান কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রতিশোধমূলক হামলা এবং সুযোগসন্ধানীদের তৎপরতা আরও বেড়ে যায়।

আওয়ামী লীগ ওএইচসিএইচআরকে একটি বিস্তারিত তালিকা দিয়েছে যাতে তাদের দলের নিহতদের নাম, তারিখ ও কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৪৪ জন নেতাকর্মী হামলায় নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে নিহত হন ১৮ জন।

তবে এ ব্যাপারে নিজস্ব কোনো তথ্য হাজির করতে পারেনি জাতিসংঘ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্মত্ত জনতা হিন্দু শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরকম একটি ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা জড়িত ছিলেন বলে ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যে থেকে জানা গেছে।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ৩৭টি সহিংস হামলায় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।

তবে, ওএইচসিএইচআর এসব ঘটনার স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট মনে করা হয় এমন গণমাধ্যমের কার্যালয়ে প্রতিশোধমূলক হামলার ঘটনাও প্রতিবেদনে তুলে আনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা ও সংঘাতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে এ ধরনের 'ঢালাও' মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে ভয়ের পরিবেশ বজায় থাকার কথা জানিয়েছেন অনেক সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। আওয়ামী লীগের পক্ষে যায় বা এর রাজনৈতিক বিরোধীদের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোকে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

আইনজীবীদের ওপর অযাচিত চাপের ব্যাপারেও প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মারধর ও হুমকির কারণে আইনজীবীদের কয়েকজন আদালতে প্রবেশ করতে পারেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার ওএইচসিএইচআরকে জানিয়েছে যে, পতিত সরকার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত আসামিদের পক্ষে থাকতেন এমন অনেক আইনজীবী পালিয়ে গেছেন বা আর আদালতে আসেন না। আদালতে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

Comments

The Daily Star  | English
Largest Islamic bank in the making

Largest Islamic bank in the making

The five banks slated for consolidation are First Security Islami Bank, Union Bank, Global Islami Bank, Social Islami Bank and Exim Bank.

12h ago