যে সেতুর কাজ শেষ হয়নি ১০ বছরেও

লোহালিয়া সেতু
পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে ১০ বছর ধরে। ছবি: স্টার

পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। ৫৭৬ দশমিক ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের এ সেতুর কাজ এখনো চলছে।

দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জনদুর্ভোগও বেড়েছে। মাঝ বরাবর ১০৭ মিটার স্টিলে কাঠামো নির্মাণের জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথ ৩ মাস বন্ধ রেখে এর নির্মাণ কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

পটুয়াখালী এলজিইডি সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, ২০১২ সালে পটুয়াখালী-বাউফল সড়কের লোহালিয়া নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন সেতুর হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৩৫ মিটার ও ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স ৭ দশমিক ৩ মিটার। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

সেতুর ৫৪ শতাংশ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ এর নির্মাণকাজে আপত্তি জানায়। ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

লোহালিয়া সেতু
নির্মাণাধীন লোহালিয়া সেতু। ছবি: স্টার

কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর আবার সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০১৯ সালের আগস্টে সেতুর হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স বাড়িয়ে ৭০ মিটার ও ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স ১৩ দশমিক ৫০ মিটার করা হয়।

সেতুর মাঝ বরাবর ১০৭ মিটার কংক্রিটের পরিবর্তে স্টিলের কাঠামো নির্মাণের জন্য নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজ শুরু হয়। এটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

করোনা মহামারিসহ বেশি কিছু কারণে কয়েক দফা সেতুর নির্মাণকাজের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি খরচও বাড়ানো হয় ৭ কোটি ৯ হাজার টাকা। এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার তারিখ ছিল চলতি বছরের ৩০ জুন।

সে সময় সেতুর ১০৭ মিটার স্টিলের কাঠামো ছাড়া বাকি অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ কাজ শেষ করে আগামী জুনে তা চালু করতে চায় এলজিইডি।

সেতুর ২ পাশে কংক্রিটের কাঠামো থাকলেও নদীর মাঝখানে স্টিলের কাঠামো নির্মাণের কাজ পায় চীনের চায়না হারজোন ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন লিমিটেড। ব্যয় ধরা হয় ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

স্টিলের কাঠামোর জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথ সাময়িক বন্ধ রাখা প্রয়োজন বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২৭ জুন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্তানুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নৌপথটি বন্ধ রেখে স্টিলের কাঠামো স্থাপনের কাজ করা হবে।

পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ লতিফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোহালিয়া সেতুর কংক্রিটের কাঠামোর কাজ শেষ। নদীর মাঝ বরাবর স্টিলের কাঠামো স্থাপনের কাজ বাকি। এটি নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তানুযায়ী ৩ মাস নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে।'

'স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করে এ কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। আগামী জুনে সেতুটি চালুর পরিকল্পনা আছে,' যোগ করেন তিনি।

সেতুটি চালু হলে জেলার বাউফল, গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ সেতু পার হয়ে বাউফলের কালাইয়া বাজার থেকে ভোলার লালমোহন উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও সুগম হবে।

সেতুটির অভাবে ওইসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষকে লোহালিয়া নদীতে খেয়া পার হয়ে পটুয়াখালী শহরে যাতায়াত করতে হয়।

দশমিনার বেতাগী-সানকিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ঝন্টু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোহালিয়া সেতু এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। এ নদীতে খেয়া পার হয়ে এ সব উপজেলার মানুষকে জেলা শহরে যেতে হয়। খেয়াঘাটে নানান রকম সমস্যা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, সেতুর নির্মাণকাজ যেন দ্রুত শেষ হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Ignore Gen Z at your peril, experts tell Nepal govt

Prominent personalities warn government and parties not to dismiss the demands of youths

2h ago