কুড়িগ্রাম

ডুবে গেছে মাঠ, ঘাস না পাওয়ায় কম দামে গরু বিক্রি করছেন কৃষক

গরুর বাজার
দুধকুমার নদের বুকে চর তিলয়ানীর কৃষকরা নৌকায় করে গরু এনে বিক্রির জন্য নাগেশ্বরী পশুর হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। ২২ জুন ২০২৩। ছবি: এস দিলীপ রায়

দুধকুমার নদীর বুকে চর তেলিয়ানীর কৃষক মোবারক আলীর (৫৮) ৪ গরু। গত বৃহস্পতিবার ২টি গরু তিনি স্থানীয় পশুর হাটে নিয়ে যান বিক্রির জন্য।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা পশুর হাটে গরু ২টি কম দামে বিক্রি করে হতাশ মোবারক।

জানালেন, ২টি গরু বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। অথচ এক মাস আগে গরু ২টির দাম উঠেছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

দ্য ডেইলি স্টারকে এই কৃষক বলেন, 'কম দামে গরু বিক্রির ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বাধ্য হয়েই করতে হলো। কারণ চরের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। ঘাস নেই। বাজারে গোখাদ্যের দাম চড়া হওয়ায় তা কিনে গরু পালন সম্ভব নয়।'

চরাঞ্চলে গবাদি পশু পালন মোবারকের মতো অনেক কৃষকের আয়ের প্রধান উৎস। প্রাকৃতিকভাবে জমিতে জন্মানো ঘাস খাইয়ে তারা গরু পালন করেন।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় তিস্তার বুকে চর গোবর্ধানের কৃষক ফজলার রহমান (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার ৬ গরু। বৃহস্পতিবার স্থানীয় পশুর হাটে ৪টি গরু কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনিও একই কারণে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানান। ফজলার রহমান বলেন, 'চরের সবগুলো জমিতে এখন শুধু পানি আর পানি। কোনো তৃণভূমি জেগে নেই। ৪টি গরুর দাম ২ সপ্তাহ আগেও উঠেছিল ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করলাম ২ লাখ ৮ হাজার টাকায়।'

গরুর বাজার
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা পশুর হাটে গরু নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। ২২ জুন ২০২৩। ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর যাত্রাপুরের কৃষক নাদের আলী মন্ডলও (৬৫) চরে পানি ওঠায় ঘাস না পেয়ে ৩ গরুর মধ্যে ২ গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।

চরাঞ্চলে পানি ওঠায় স্থানীয় পশুর হাটে গরু সরবরাহ অনেক বেড়ে গেছে।

কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর পশুর হাটের গরুর পাইকার ব্যবসায়ী জুলহাস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরে পানি ওঠায় কৃষকরা গরু বিক্রি করতে পশুর হাটগুলোতে ভিড় করছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় গরু কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে অনেক কৃষক কম দামে গরু বিক্রি করতে অনাগ্রহী। তারা গরু বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।'

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ২৬টি নদ-নদীর বুকে প্রায় ৫০০ চরাঞ্চলে ৬ লাখ গরু-মহিষ ও ৭ লাখ ছাগল আছে। চরাঞ্চলের গবাদি পশু পালন তৃণভূমির ওপর নির্ভরশীল।

লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলে পানি উঠেছে। এতে চরের তৃণভূমিগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে চরের কৃষকরা গবাদি পশু পালনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।'

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

18h ago