‘মানবিক করিডোর’ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে যা বললেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ছবি: জামিল খান/স্টার

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, মিয়ানমারের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইনে 'মানবিক করিডোর' নিয়ে বাংলাদেশ কাউকে সম্মতি দেয়নি এবং এটি 'বিভ্রান্তিকর' এবং 'ভুলভাবে' ব্যবহৃত হচ্ছে। 

আজ রোববার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) যৌথ আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

খলিলুর রহমান বলেন, 'আমরা "মানবিক করিডোর" নিয়ে কোনো আলোচনা করিনি। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এনিয়ে কোনো পক্ষের সঙ্গে সমঝোতাও হয়নি।'

'এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিবও "করিডোর" শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি "মানবিক চ্যানেল" ব্যবহার করেছেন, যা একেবারেই আলাদা,' বলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, 'রাখাইনে কোনো ধরনের মানবিক তৎপরতা পরিচালনার জন্য উভয় পক্ষের সম্মতি আবশ্যক।'

'আরাকান আর্মি ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে—কীভাবে যুদ্ধবিরতি হবে, যখন তাতমাদাও (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) এখনো বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে,' বলেন খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা বলেছে, যদি আরাকান আর্মি স্থল অভিযান বন্ধ করে, তবে তারা বিমান হামলা চালাবে না। সংঘর্ষ হয়নি,  বিমান হামলাও হয়নি। যুদ্ধে একটি বিরতি এসেছে—এটাই এ পর্যন্ত অর্জন।'

যুদ্ধে চলমান বিরতি স্থায়ী হলে শান্তি ও প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনার পথ তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমি এটাকে শান্তি বলছি না। কিন্তু যুদ্ধ না থাকাটা ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারলে শান্তির একটা সূচনা হতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে।'

তবে, রাখাইনের বর্তমান প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি না হলে সেখানে টেকসই শান্তি আনা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, 'আরাকান আর্মি ও ইউনাইটেড লীগ অব আরাকানের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের কোনো অবস্থান নেই— এটি একপ্রকার জাতিগত নিধনের চিত্র।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ জাতিসংঘের মাধ্যমে বিষয়টি মিয়ানমারকে জানিয়েছে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। আমরা মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়া জানতে অপেক্ষা করছি।'

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যাচাইয়ের জন্য রোহিঙ্গাদের ছয়টি তালিকা দিয়েছে এবং মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার জনের যাচাইকৃত একটি তালিকা পেয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিবেশী দেশের সংবাদমাধ্যমে রাখাইনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের 'প্রক্সি যুদ্ধের' বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

'৮ এপ্রিল আমি একটি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি এটা অযৌক্তিক,' যোগ করেন তিনি।

'এমনকি কক্সবাজারে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির সঙ্গে একটি সাধারণ বৈঠককেও "গোপন সামরিক বৈঠক" বলে উপস্থাপন করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

খলিলুর রহমান বলেন, 'আমরা মিয়ানমারকে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি যে আমরা তাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি।'

'এ ধরনের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া জটিল এবং এগুলো ধৈর্য ও বিচক্ষণতা দিয়ে পরিচালিত করা উচিত, জনমত বা গুজবে প্রভাবিত হয়ে নয়,' বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, 'আমরা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আত্মীকরণ করতে চাই না। সেটি করলে জাতিগত নিধনকে বৈধতা দেওয়া হবে—এটি আমাদের "রেড লাইন"।'

তিনি আরও বলেন, 'অতীতে কূটনীতি ও সামরিক চাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করা হয়েছে। এখন একটি টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।'

'রোহিঙ্গারা ফিরবে। সহজ হবে না, কিন্তু আমরা এটা করব,' বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

Comments

The Daily Star  | English
government

Govt to act with people’s backing if blocked from responsibilities: advisory council

"The Advisory Council believes that a broader unity is essential to maintain national stability"

34m ago