৮ বছর পর প্রবাসী হত্যার রহস্য উদঘাটন, স্ত্রী ও ভাইসহ গ্রেপ্তার ৩

স্বামী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার নাছিমা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

ওমান থেকে ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ফেরত আসা এক প্রবাসী হঠাৎ নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে তার মরদেহ মিললেও হত্যাকারীর পরিচয় নিশ্চিতে আট বছর সময় নেয় পুলিশ। 

সম্প্রতি এই খুনের ঘটনায় নিহত নাজিম উদ্দিনের স্ত্রীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গতকাল সোমবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন স্ত্রী নাছিমা আক্তার।

আজ মঙ্গলবার সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। 

পুলিশ সূত্র ও নাছিমার জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুনে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে কাউকে কিছু না জানিয়েই দেশে ফেরত আসেন নাজিম। ছেলের নিখোঁজের খবর না জানানো ও অন্যান্য কারণে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ বাঁধে নাজিমের। 

একদিন দুই মেয়ে স্কুলে থাকা অবস্থায় এই দম্পতির ঝগড়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক নাছির উদ্দিন রাসেল জানান, সেদিন দুপুর ১২টার দিকে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পড় মারেন নাজিম। ক্ষিপ্ত হয়ে নাছিমা তাকে ধাক্কা দিলে দরজার চৌকাঠের সঙ্গে থাকা লোহায় লেগে মাথায় আঘাত পান তিনি।

ব্যাপক রক্তপাতের পর ঘটনাস্থলেই মারা যান নাজিম।

'স্বামী মারা গেছেন বুঝতে পেরে তার লাশ টেনে মুরগির খাবার রাখার ঘরের এক কোণে কম্বল ও তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন নাছিমা। এরপর ঘরের ফ্লোরে থাকা রক্ত ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করেন। মেয়েরা আসার আগেই স্বামীর পাসপোর্ট ও অন্যান্য দলিল পুড়িয়ে ফেলেন। মেয়েরা বাসায় এসে বাবার কথা জিগ্যেস করলে নাছিমা জানান, তাদের বাবা আবার বিদেশ চলে গেছে,' বলেন সিআইডি কর্মকর্তা নাছির।

তিনি আরও জানান, সুগন্ধি ব্যবহার করে স্বামীর মরদেহ প্রায় সাত দিন মুরগির খাবার রাখার ঘরে অন্যান্য মালামালের সঙ্গে লুকিয়ে রাখেন নাছিমা। পরে দেবর জসিম উদ্দিনের সহায়তায় বস্তায় ভরে লাশটি পুকুরে ফেলেন তিনি।

এর কিছুদন পর ১৮ জুলাই রাউজান থানাধীন দক্ষিণ সত্ত্বা ফজল করিম মেম্বারের পুকুরের উত্তর পশ্চিম কোনায় একটি পানিপূর্ণ গর্তে বস্তার ভেতরে পচা-গলা অবস্থায় একটি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পরদিন রাউজান থানায় একটি মামলা দায়ের করে। একই সময় নাজিম উদ্দিনের ভাই তার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করেন।

লাশ উদ্ধার ও নিখোঁজ ডায়রি, দুটি প্রায় একই সময়ে হওয়ায় হতাহতের পরিচয় শনাক্তের জন্য নাজিম উদ্দিনের ভাই জসিম, স্ত্রী নাছিমা ও মেয়ে ইসরাত জাহানের ডিএনএ নমুনা নেয় সিআইডি।

প্রায় তিন বছর পর ২০২০ সালে ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে পায় পুলিশ। জানতে পারে, অজ্ঞাতনামা লাশটি নাজিমের।

তখন নাছিমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বামীর ব্যাপারে একেক সময় একেক উত্তর দেন বলে জানান নাছির। এক পর্যায়ে তিনি দাবি করেন, তার স্বামী বিদেশে ফেরত গেছেন।

কিন্তু পুলিশ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে জুনে নাজিম দেশে আসলেও তার ফেরত যাওয়ার কোনো রেকর্ড নেই।

ঘটনার আট বছর পর, সম্প্রতি নাছিমার স্বীকারোক্তি আদায় করতে সক্ষম হয় পুলিশ। 

চট্টগ্রাম সিআইডির পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা বলেন, 'আট বছরের তদন্ত শেষে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে আসামী গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে একের পর নাটক সাজিয়েছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট ও পুলিশের তদন্তে শেষে ক্লুলেস এই হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।'

এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে নাজিমের ভাই জসিম উদ্দিন ও আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

10h ago