মুখে দিলেই মিলিয়ে যায় সরাইলের চুনিলালের রসগোল্লা

ছবি: স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বাজারে মিষ্টির দোকানে গত চার দশকের বেশি সময় ধরে কেবল একটিই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। স্বাদে-গুণে অন্যন্য এই মিষ্টি—'চুনিলালের রসগোল্লা' নামে খ্যাতি পেয়েছে। এর টানেই ভোজনরসিকেরা ছুটে আসেন সরাইল থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে গ্রামের এই বাজারে।

এই রসগোল্লার স্রষ্টা ৭০ বছর বয়সী সুনীল মাল্লিক, যিনি এলাকায় 'চুনিলাল' নামে বেশি পরিচিত। তার রসগোল্লা সাধারণ মিষ্টির চেয়ে আলাদা। খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে তৈরি প্রতিটি রসগোল্লার ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। তুলতুলে নরম এই মিষ্টি মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। মিষ্টতার মাত্রা একেবারে পরিমিত, তাই এর স্বাদ অনন্য। আকার, গুণমান ও স্বাদের এই নিখুঁত সমন্বয় চুনিলালের রসগোল্লাকে করেছে আলাদা।

ছবি: স্টার

চার দশকের বেশি সময় ধরে শুধু এই একটি মিষ্টিই তৈরি করছেন সুনীল মল্লিক। প্রতিদিন ছেলে গোপাল মল্লিককে সঙ্গে নিয়ে ক্রেতাদের সামনেই গরম রসগোল্লা তৈরি করেন তিনি। ক্রেতারা শুধু কিনতেই নয়, তৈরি করার দৃশ্য দেখতেও ভীড় জমান। চাহিদা বাড়লেও অন্য কোনো মিষ্টি তৈরির কথা ভাবেননি। বরং একটি পদকেই নিখুঁত করতে দিয়েছেন পুরো মনোযোগ। বাবার দেখানো পথেই হাঁটছেন ছেলে গোপাল। আগলে রেখেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য।

সুনীল মল্লিক বলেন, 'আমরা কোনো কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করি না। খাঁটি দুধের ছানা আর পরিমিত চিনিতে তৈরি করি। মানুষ এর স্বাদে সেই খাঁটিত্ব খুঁজে পায়, এটাই আমাদের তৃপ্তি।'

চুনিলালের রসগোল্লার খ্যাতি এখন শুধু সরাইলের অরুয়াইল গ্রামেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। প্রবাসীদের কাছে স্বজনদের পাঠানো উপহারের তালিকায় প্রায়ই থাকে এই রসগোল্লা।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসেন পরিবার নিয়ে সম্প্রতি চুনিলালের দোকানে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গিয়েছিলাম। এমন বড় ও সুস্বাদু রসগোল্লা জীবনে দেখিনি।'

অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন মৃধা বলেন, 'চুনিলালের রসগোল্লা এখন সরাইলের পরিচয়ের অংশ হয়ে গেছে। এটি শুধু মিষ্টি নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতীকও।'

সরাইল ইতিহাস ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক সঞ্জীব কুমার দেবনাথের ভাষায়, 'এটি এখন আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসে এই রসগোল্লা খেতে। আমরা চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে।'

বর্তমানে চুনিলালের প্রতিটি রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এক কজির দাম ৪০০ টাকা। বাজারের অন্যান্য রসগোল্লার তুলনায় দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্রেতারা মনে করেন এর আকার, স্বাদ ও মান অনুযায়ী দাম ন্যায়সঙ্গত।

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

5h ago