বাংলাদেশে কাজ করা খুবই ডিফিকাল্ট: সিইসি

বাংলাদেশে কাজ করা খুব কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে কাজ করা খুবই ডিফিকাল্ট। পার্টিকুলারলি যেই অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশ যাচ্ছে তাতে কাজ আদায় করে নেওয়া কঠিন। কিছু কিছু পক্ষের লোকের জন্য খুব সুবিধা। আর বেশিরভাগ পক্ষের লোকের জন্য ডিফিকাল্ট। এই সিচুয়েশনে আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি।'
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করছি। এতে আমরা অনেক প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।'
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, 'আপনারা ওয়াদা করেছিলেন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন এবং প্রফেশনালি কাজ করবেন। আইন মেনে কাজ করবেন।…ইনস্ট্রাকশন আমরা দেবো। কিন্তু বেআইনি কোনো ইনস্ট্রাকশন আমরা দেবো না। আমরা কাউকে ফেভার করার জন্য ইনসট্রাকশন দেবো না। আমরা কারো পক্ষে কাজ করার জন্য ইনস্ট্রাকশন দেবো না।'
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, 'আমি চাই কোনো দলের পক্ষে হয়ে কেউ কাজ করবেন না। এটা আমরা প্রত্যাশা করি না এবং আপনারা আজকে ওয়াদা করলেন যে কোনো ব্যক্তির বা পক্ষের পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আপনারা কোনো কাজ করবেন না।'
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সিইসি আরও বলেন, 'আমরা সম্পূর্ণ আইন ও বিধি মোতাবেক, সঠিক কাজটি সঠিকভাবে করার নির্দেশনা দেবো। কাজটা সঠিকভাবে আপনারা করছেন তা আমরা নিশ্চিত করব।
সিইসি বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের বিশেষভাবেই এটা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ অ্যারেঞ্জমেন্টের মাধ্যমেই এটাকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।
আগামী নির্বাচন ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অতীতে যাই করে থাকুন না কেন। আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা এটা পারি। এর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমি এটা নিশ্চিত করব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং জাতি হিসেবে এই মুহূর্তে একটা সময়ের ক্রস রোডে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, 'যেসব কারণে আমরা জুলাই অভ্যুত্থান দেখেছি তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দেশে ভালো নির্বাচন না থাকা। ফাইনালি যেসব কারণে জুলাই হয়েছে তা হলো পচা নির্বাচন বা নির্বাচনের নামে প্রহসন। আপনারা একবার চোখ বন্ধ করে চিন্তা করেন, ভালো নির্বাচন হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো কি না?'
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'এই নির্বাচন কমিশন কখনোই আপনাদের পক্ষপাতিত্বমূলক, দুষ্ট কোনো নির্বাচনের ইনস্ট্রাকশন দেবেন না।'
আবুল ফজল আরও বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো চাপ কোনো ইনস্ট্রাকশন, কোনো ধরনের ইনিয়ে-বিনিয়ে কিচ্ছু বলা হবে না। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। স্বচ্ছ নির্বাচন হতেই হবে।'
ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, 'নির্বাচনের ব্যাপারে, নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে অনেক অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে এবং নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন ভালো নির্বাচন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই।'
বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে ইসি তাহমিদা আহমদ বলেন, বিগত দিনে যেটা হয়েছে, আমরা দেখেছি, আপনারা দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। আপনাদের অবস্থা ছিল হৈমন্তী শুক্লার গানের মতো 'আমার করার কিছুই ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম'...অনেকটা এ রকম। কিন্তু এবার হবে উল্টো। চেয়ে চেয়ে দেখার আর সময় থাকবে না।'
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, অতীতের যেকোনো নির্বাচনের থেকে আসন্ন নির্বাচন চ্যালেঞ্জের। আমরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে চাই।
আখতার আহমেদ বলেন, 'ইসির চ্যালেঞ্জ দুটি। একটি হলো এআই-এর অপপ্রয়োগ, আরেকটি প্রবাসীদের ভোটাধিকার। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করব। ধাপে ধাপে কাজ করছি, রাতারাতি কিছু হবে না। আমরা কাজ করে সব কিছু আদায় করতে চাই। ভালো নির্বাচনের বিকল্প নেই, এজন্য জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো কৃপণতা নেই। আমরা চেষ্টা করছি সব কাজ ভালোভাবে করতে।'
নির্বাচনে এআই-এর অপব্যবহার এবং পোস্টাল ভোটিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুন্দর নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে বলে জানান ইসি সচিব।
Comments