ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরামর্শ নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের

সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরও জোরদার এবং শক্ত ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিয়ে তারা বলেন, শুধু আইন ও আইনের নির্দেশনা জারি করলে চলবে না, স্বচ্ছতা দিয়ে ইসির কার্যক্রম চালাতে হবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার কমিশনার ও নয়জন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং একজন পর্যবেক্ষক অংশ নেন।
নির্বাচনে আচরণ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই শক্ত অবস্থানে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ভোটকেন্দ্র পাহারা কমিটি গঠন, ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া, দলীয় সংশ্লিষ্টতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়া, নির্বাচনী এলাকায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার রাখা, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একইদিনে করা, বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের এবার নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা এবং কালো টাকা, অর্থ পাচারকারী ও ঋণ খেলাপিদের নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন তারা।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মুনিরা খানম বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের আলোচনা হচ্ছে। গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একইদিনে করতে পারেন। আলাদা করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে যেকোনো নির্বাচনেই পেশীশক্তির ক্ষমতা দেখা গেছে। নির্বাচন করতে দেওয়া হতো না। মিছিল করতে গেলেই অন্যপক্ষ এসে হামলা করতো। এটা এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। বাংলাদেশে ভোট কারচুপি ও ব্যালট ছিনতাই হয়েছে, এমন কিছু নাই যে সেটা হয়নি!
তফসিলের আগেই আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়ে সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, এখনই বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি পর্যায়ে নানা কার্যক্রম চলছে। সাধারণত এসব কার্যক্রম তফসিলের পর থেকে ইসি গঠিত কমিটি মনিটর করে। তবে সেটি তফসিলের আগেই শুরু করা গেলে নির্বাচনী পরিবেশ আরও ভালো থাকবে এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন এবং বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মাহফুজা আক্তার আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি অধ্যাদেশ জারি করে নির্বাচনী দায়িত্বগুলো প্রত্যেকের মধ্যে সুনির্দিষ্ট করে দেয় এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়, তাহলে মনে হয় ভালো হবে। কারণ রিটার্নিং অফিসার অনেক সময় নির্বাচনী দায়িত্ব পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন না।
একটি জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার রাখার পরামর্শ দিয়ে সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের আরপিওতে আছে সহকারী রিটার্নিং অফিসার একের অধিক নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার একাধিক নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ছোট জেলায় খুব বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু বড় এলাকায় সমস্যা হয়।
জাতীয় নির্বাচন করতে প্রায় ১০ লাখ লোকবল প্রয়োজন উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জকরিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশনের লোকবল আড়াই হাজার। ইসির বাইরে সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে লোকবল নিয়োগ করা হয়। এসব লোকবল নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে এমন প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো দলীয় প্রতিষ্ঠান। যেমন ইসলামী ব্যাংকসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি মাথায় রেখে লোকবল নিয়োগ করতে হবে। বিগত তিন নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের নিয়োগ এড়ানো যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর দেওয়া অস্ত্র ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাল টাকা, সন্ত্রাস, মাদক বন্ধে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া এবং কম সংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের পরামর্শ দেন ড. জকরিয়া।
সমাপনী বক্তব্যে গত তিন নির্বাচনে ভোটের দায়িত্বে থাকা সবাইকে বাদ না দেওয়ার পেছনে যুক্তি তুলে ধরেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের নিয়ে সবাই সন্দেহ পোষণ করেন। তবে ভালো-খারাপ তো সবখানেই আছে। এখন ১০ লাখ লোকের (ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে সাধারণত) মধ্যে বাদ দিতে গেলে, কম্বলই উজাড়। 'লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়'—আমার অবস্থা হয়েছে সে রকম।
'তাদের কিছু নিতে হবে। তবে তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। মানুষ তো মানুষই,' বলেন তিনি।
সিইসি আরও বলেন, আমরা ব্যাংক থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নেওয়ার কথা বলছি। আমাদের কাছে নানা কারণে অভিযোগ আসছে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার বিষয়ে। আমরা বিষয়টি লক্ষ্য রাখবো। কারও যদি রাজনৈতিক অভিলাষ থাকেও, সেটা বাস্তব কাজে প্রতিফলিত হবে না, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। কোনো পক্ষে কাজ করলে অ্যাকশন হবে।
Comments