আগে গণভোট, পরে সংসদ—আইনের প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী: শাহদীন মালিক
আগে গণভোট, পরে সংসদ—আইনের প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক।
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে শাহদীন মালিক বলেন, 'আমি যদি আইনি দৃষ্টি থেকে বলি, এই যে গণভোটের কথা বলা হচ্ছে, দুনিয়ার সব দেশে রেওয়াজ হলো একটা প্রস্তাব সংসদে পাস হবে, তারপরে জনগণের কাছে গণভোটে যাওয়া হবে। আগে গণভোট, পরে সংসদ, এটা কিন্তু আইনের প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী।'
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ করেছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন, অর্থাৎ নয় মাস সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।
সুপারিশ অনুসারে, সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো খসড়া বিল (সংবিধান সংশোধনী আইনের খসড়া) আকারে তৈরি করবে সরকার। বিলটি গণভোটে দেওয়া হবে। গণভোটে তা পাস হলে সংবিধান সংস্কার পরিষদ মূল ভাব ঠিক রেখে প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করবে। তবে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে যদি ব্যর্থ হয় কিংবা অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বলা হচ্ছে যে, সংসদ বসলে ২৭০ দিনের মধ্যে সেটা তাদের গ্রহণ করতে হবে অথবা আপনাআপনি এটা পাস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। আইনে এ রকম ধরে নেওয়া যায় না। সংসদকে একটা জিনিস পক্ষে বা বিপক্ষে বলতে বা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করলে সংসদ আর সার্বভৌম থাকে না।'
'আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে, এই প্রস্তাবিত ৪৮টি সংবিধান-সংক্রান্ত ধারা তো বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থী-সাংঘর্ষিক। এগুলো যদি সংসদ পাসও করে; আমাদের কিন্তু অনেকগুলো সংবিধান সংশোধনী সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছে, তবে এটা নিঃসন্দেহে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। গণভোট এক সময় আয়োজন করা যাবে কিন্তু আগে গণভোট পরে সংসদ, এটা হয় না,' যোগ করেন তিনি।
শাহদীন মালিক বলেন, 'আগে সংসদ নির্বাচন হয়ে, তারপর সংসদ যদি পাস করে, মনে করে এটা গণভোটের দেওয়া দরকার, তখন এটা গণভোটে যাবে। আর এই ৪৮টি প্রস্তাবের ওপর গণভোট মানুষ কেমন করে বুঝে হ্যাঁ-না বলবে, এটা তো সম্পূর্ণ অবাস্তব একটা প্রস্তাব।'
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অধ্যাদেশ জারির দাবি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টাকে এটি জারি করতে হবে—দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, 'আইন পাস করার ক্ষমতা হলো সংসদের, আর ক্ষেত্র বিশেষে যখন সংসদ থাকে না, তখন সাময়িকভাবে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রধান উপদেষ্টা তো প্রধানমন্ত্রীর মতো, অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগের প্রধান। নির্বাহী বিভাগের প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা কখনো আইন পাস করতে পারে না। তাহলে তো আমাদের যে তিনটা অঙ্গ—একজনের কাজ আইন পাস করা, একজনের কাজ বিচার করা, একজনের কাজ দেশ পরিচালনা করা; তাহলে তো এখন সুপ্রিম কোর্ট বলবে যে, আমরা আইন পাস করব অথবা আইন সভা বলবে যে, আমরা বিচার করব। এ তো হয় না! এগুলো তো আইনে নেই। এগুলো সব উদ্ভট ধারণা।'
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও যোগ করেন, 'বিএনপি যে অভিযোগ করেছে, এটা নিঃসন্দেহে গুরুতর অভিযোগ। কারণ বিএনপি তো আলোচনায় ছিল, তারপরে এখন ওরা বলছে যে, যেসব ব্যাপারে আলোচনা হয় নাই বা আলোচনার অনেক কিছু বাদ পড়ে গেছে—এটা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ।'


Comments