সংসদ সদস্য ৬৪৮ জন না—ব্যাখ্যায় যা বললেন আইনমন্ত্রী

সংসদ সদস্য ৬৪৮ জন না—ব্যাখ্যায় যা বললেন আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

সংসদ সদস্যের সংখ্যা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, 'যারা বলছেন যে, এখন ৬৪৮ জন সংসদ সদস্য আছেন, তারা সংবিধানকে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করছেন না এবং আমার মনে হয়, রাজনৈতিক কারণে সারা দেশে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য তারা এই বক্তব্য দিচ্ছেন অথবা সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো সম্বন্ধে তাদের সম্যক জ্ঞান নেই।

'আমি মনে করি, কারও জ্ঞান আছে কি না জ্ঞান নেই সেটা বলার আগে তারা যে কথাটা বলছেন; উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন,' বলেন তিনি।

সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলা আছে, "সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।" অর্থাৎ সংসদের পাঁচ বছর পূর্তি হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে। গতবারের যে সংসদ ছিল সেটা ৩০ জানুয়ারি বসেছিল এবং ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি তার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়। তার মানে ৩০ জানুয়ারির ৯০ দিন আগে যে কোনো সময় এই নির্বাচন করা প্রয়োজন ছিল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে।

'আরেকটা কথা আছে, "তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্য রূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।" মানে যে সংসদ ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত সেটার সমাপ্তি না হবে তারা কার্যভার গ্রহণ করবে না। সংসদ সদস্যের কার্যভার সংসদে বসা, সংসদে আইন প্রণয়ন করা, সংসদে বক্তব্য দেওয়া,' বলেন তিনি।

১৪৮(২)(ক) অনুচ্ছেদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'এতে বলা হয়, "১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীন অনুষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি যে কোন কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।" অর্থাৎ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার তিন দিনের মধ্যে তারা শপথ নেবেন। শপথ ও কার্যভার গ্রহণ করা দুটি আলাদা জিনিস। শপথ নেওয়া মানেই ও কার্যভার গ্রহণ করা নয়।

'শেষ কথা বলবো ৫৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।" নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সংসদীয় কমিটির মিটিং করে আমরা আমাদের নেতা নির্বাচিত করেছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে,' বলেন আইনমন্ত্রী।

আগামী ৩০ জানুয়ারি সংসদ ডাকা হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, 'তার মানে হচ্ছে সংবিধান সম্পূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। যখন এই পুরোনো সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তখনই সংসদ সদস্যরা তাদের কার্যভার গ্রহণ করবেন। যারা অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য—জনগণকে বিভ্রান্ত করা অথবা সংবিধান সম্বন্ধে তাদের সম্যক জ্ঞান নেই।'

এক প্রশ্নের জবাবে বর্তমান সংসদ সদস্য ৩৪৮ জন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, 'এমপি হবে যখন তারা কার্যভার গ্রহণ করবে। শপথ নেওয়া এবং কার্যভার গ্রহণ করার মধ্যে তফাৎ আছে।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'গেজেট হয়েছে, গেজেটের কথা লেখা আছে সংবিধানে কিন্তু কার্যভারের কথা লেখা নেই।'

নির্বাচিতরা এমপি কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, 'এমপি ইলেক্ট।'

আমেরিকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'ইভেন নাম্বার ইয়ারে নভেম্বরের প্রথম যে মঙ্গলবার, সেই মঙ্গলবারে আমেরিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি কার্যভার গ্রহণ করেন ২১ জানুয়ারি অড নাম্বারের বছরে। মাঝের সময় তারা এমপি ইলেক্ট থাকেন। এখন সংসদের কোনো অধিবেশন নেই, গত সংসদের অধিবেশন শেষ হয়ে গেছে। (নির্বাচিত) তারা শপথ নিয়েছেন এমপি হিসেবে। ৩০ জানুয়ারি তারা কার্যভার গ্রহণ করবেন, তারা তাদের কাজ শুরু করবেন।'

অনেকে মন্ত্রী হয়ে গেছেন—এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, 'সংবিধানে লেখা নেই শপথ নিয়ে, কার্যভার নিয়ে মন্ত্রী হতে হবে।'

আনিসুল হক বলেন, 'আমরা এমপি হয়েছি কিন্তু এমপি যে কাজ সেটা গ্রহণ করিনি। পুরোনো যারা আছেন, তারা আর কাজ করতে পারবেন না।'

সংসদে কার্যভার গ্রহণ করা মন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত না বলেও জানান তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, 'শপথের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত না।'

যারা আগের সংসদে ছিল, তারা যদি আর না বসে তাহলে কীভাবে ৩০০ জন (সংসদ সদস্য) আছে, প্রশ্ন রাখেন আইনমন্ত্রী।

Comments

The Daily Star  | English
Before Hasina lost in the court of law she had lost in the court of the people

Before Hasina lost in the court of law, she had lost in the court of the people

Her reputation lies in ruins and her political career buried under a mountain of debris of self-righteous arrogance, misgovernance, and impunity

2h ago