অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সাংবিধানিক সংস্কারে বিএনপির ‘না’

বিএনপি বলছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা কোনো সাংবিধানিক সংস্কার সমর্থন করবে না। তাদের যুক্তি, এ ধরনের পরিবর্তন হতে হবে সংসদে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দেওয়া এক চিঠিতে দলটি জানায়, কেবল সাংবিধানিক সংশোধন ছাড়া যেসব প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলোই অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ, বিধি বা প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে পারে।
ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাইলে গত বুধবার বিএনপি এই চিঠি পাঠায়।
চূড়ান্তকরণের অপেক্ষায় থাকা জুলাই সনদে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে দুই দফা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, 'সাংবিধানিক সংস্কারের সব প্রস্তাব নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।'
বিএনপি সতর্ক করেছে, জুলাই সনদকে 'সাংবিধানিক দলিল' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তা হবে 'আইন ও সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য'।
চিঠিতে আরও সতর্ক করা হয়, বর্তমান সংবিধানের অধীনে গঠিত কোনো সরকার যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে বিদ্যমান ব্যবস্থা পাল্টে নতুন কিছু চাপিয়ে দেয়, তাহলে তা 'বিপ্লব নয়, ক্যু হিসেবে গণ্য হবে।'
দলটি আরও বলেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে যদি কোনো দল বা গোষ্ঠী 'অসম্মানজনক পথে' ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে তা হবে জাতির জন্য 'দুঃখজনক'।
চিঠিতে জোর দিয়ে বলা হয়, 'একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করার যেকোনো বিপজ্জনক চেষ্টা বাস্তবসম্মত নয়।'
দ্য ডেইলি স্টারকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান কার্যকর থাকা অবস্থায় কোনো ব্যবস্থাই সেটা পরিবর্তন করতে পারে না।
তিনি বলেন, 'এ ধরনের কিছু করা হলে আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং সেটা টিকবে না।'
গত ৫ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের উল্লেখ করে চিঠিতে বিএনপি বলেছে, তিনি সনদটিকে 'একটি প্রতিশ্রুতি' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
তাকে উদ্ধৃত করে দলটি লিখেছে, জুলাই সনদে সই করে রাজনৈতিক দলগুলো জাতির প্রতি প্রতিশ্রুতি দেবে যে তারা এটি বাস্তবায়ন করবে।
বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার বাস্তবায়ন সংক্রান্ত 'গভীরভাবে চিন্তিত ও পরিকল্পিত' অবস্থানের প্রশংসা করেছে এবং ঐকমত্য কমিশনকে তার নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্বাচিত জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সাংবিধানিক সংশোধনী সংক্রান্ত জুলাই সনদের সুপারিশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে অসমাপ্ত থাকা অন্যান্য সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে।
চিঠিতে দলটি তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো হলো—
- বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই সনদের সংবিধান সংস্কার বিষয়ক সুপারিশ ব্যতিরেকে আশুকরণীয় নয় এরূপ অন্যান্য সুপারিশ যথাসম্ভব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এতদুদ্দেশ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ জারি, বিধি প্রণয়ন, প্রশাসনিক আদেশ জারি, প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ বা অন্য কোনো বৈধ পন্থা/কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে।
- পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। উক্ত সরকার গঠনকারী সম্ভাব্য সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সইয়ের মাধ্যমে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক এ ক্ষেত্রে জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে।
- পরবর্তী নির্বাচিত জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধান সংশোধনী সম্পর্কিত সুপারিশ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক অসম্পন্ন অন্যান্য সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। উক্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সইয়ের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে।
বিএনপি আরও বলেছে, আগামী নির্বাচনের পর সংসদে আসন পাওয়া রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সইয়ের মাধ্যমে দেওয়া তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।
অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানায়, যেখানে ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে, সেখানে বিএনপি ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের তিন দফা পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
Comments