বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না রাখতে ইসির কাছে আহ্বান বিএনপির

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান। ছবি: আহমেদ দীপ্ত/স্টার

সরকার ও প্রশাসনে থাকা বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত না করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহবান জানিয়েছে বিএনপি।

ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির নেতারা বলছেন, ইসিও এ বিষয়ে সতর্ক আছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান এসব বলেন।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি রাজনৈতিক দলে অনুগতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে অতীতের তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রহসনের শিকার হয়েছেন, তা সবারই জানা। এই বাস্তবতার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত না হতে পারেন।

'কমিশন যেন এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেন, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে,' বলেন তিনি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে আজ সকাল ১১টার দিকে বৈঠকে করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে এই বৈঠক নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

এই দলে আরও ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া।

বৈঠক শেষে মঈন খান বলেন, অতীতের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা বাস্তবসম্মত নয়। বরং তাদের মধ্যে যারা অতীতে চাপ বা ভয়ের কারণে অন্যায় করেছে, তাদের এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ অন্তরে গণতান্ত্রিক। যখন তারা বুঝবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তখন এটি উৎসবমুখর একটি ঘটনার রূপ নেবে।

তার ভাষ্য, 'আমাদের লক্ষ্য কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। গত ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুর্নপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আমরা চাই ১৮ কোটি মানুষ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, আর ১২ কোটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।'

মঈন খান বলেন, প্রশাসনের লোকেরা তো কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিগত ১৭ বছরে এই দেশের প্রশাসনিক বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেড করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এই নির্বাচনগুলো নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এই তিনটি নির্বাচন হয়েছিল প্রহসনের নির্বাচন। কাদের দ্বারা হয়েছিল? এই যে যারা সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেছিল, তাদের কারণে হয়েছিল। এই কথাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে বলেছি।'

আবদুল মঈন খান বলেন, 'আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি যেন তারা একটি উদাহরণ স্থাপন করে, যেন দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।'

মঈন খান মনে করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত। তবুও একটি দিনে সারাদেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও তিন লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন।

এই জনবল সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আসে। ফলে এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

'নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে যেন জনগণ বিশ্বাস করে যে, তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দৃশ্যমানভাবে সেই নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে,' যোগ করেন তিনি।

মঈন খান বলেন, বিএনপি আগেই নির্বাচনী সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন যদি সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

তার ভাষ্য, 'আমরা চাই, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যেন বিশ্ব বুঝতে পারে বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।'

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, 'আমরা অনেকেই যে ভয়টা পাচ্ছি, নির্বাচনের দিনে বিশৃঙ্খলা হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষতি হবে। আমি বিশ্বাস করি যে নির্বাচন একটি উৎসবমুখর কর্মকাণ্ডে পরিণত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা যে আশঙ্কা করছি সে আশঙ্কা থাকবে না।'

ইসির কাছে বিএনপি কয় দফা প্রস্তাব জমা দিয়েছে জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, 'আমরা কোনো প্রস্তাব জমা দেয়নি।'

ইসির সঙ্গে গণভোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, 'সাধারণ নির্বাচন যেদিন হবে সেদিনেই আমরা রেফারেন্ডাম চাই।'

Comments