খালেদা জিয়া কখনো নির্বাচনে হারেননি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে একটি শব্দ কখনোই জায়গা পায়নি—সেটা হলো 'পরাজয়'।
বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী রেকর্ডের সঙ্গে কেউ পাল্লা দিতে পারেনি। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে তিনি কখনো পরাজয়ের মুখ দেখেননি।
বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা কিংবা খুলনা—ভোটের মাঠ বদলেছে, কিন্তু ফল বদলায়নি। পাঁচ নির্বাচনে মোট ২৩টি আসন থেকে প্রার্থী হয়ে প্রতিটিতেই জিতেছেন। ব্যালট পেপারে তার নাম মানেই যেন জয়ের নিশ্চয়তা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার মনোনয়ন যখন ঘোষণা করা হয়, প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে তিনি সেরে উঠবেন। কেবল সেই আস্থা থেকেই তাকে প্রার্থী করা। কিন্তু আসলে এটি আরও অনেক গভীর বিষয়।
একমাত্র তাকেই দল থেকে তিনটি আসলে প্রার্থী করার মাধ্যমে এই বাস্তবতাই তুলে ধরা হয় যে জনপ্রিয়তায় তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। এমনকি লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থাতেও বিএনপির সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী ছিলেন খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক জাগরণের সঙ্গে তাল মিলিয়েই তার রাজনৈতিক উত্থান। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনর্বহালের পর তিনি ও শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় রাজনীতির দুই মেরু।
তাদের অন্তত ১৫ বছরের দ্বন্দ্ব নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয় পর্যন্ত সবকিছুতেই প্রভাব ফেলেছে। দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ ছিল এই দুই নারীর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে।
১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পাঁচটিতেই জয়ী হন। ১৯৯৬ সালের প্রথম নির্বাচনে—যেটি বিরোধী দলগুলো বর্জন করায় বিতর্কিত হয়—তিনি আবারও পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন।
সেই নির্বাচনের পর বিএনপির জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকলেও এবং বিরোধীদের দাবির মুখে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিতে হলেও ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে তিনি আবারও পাঁচটি আসনে জয় পান।
এই ধারা ২০০১ সালেও অব্যাহত থাকে। তিনি আরও পাঁচটি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরেন।
২০০৮ সালে যখন বিএনপি মাত্র ৩০টি আসন পায়, বিএনপি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পরাজয় বরণ করে, খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রার্থী হয়েছে প্রতিটিতেই জয় পান। দল ভেঙে পড়েছিল চারদিকে, কিন্তু তিনি টিকে ছিলেন।
তার এই অপরাজেয়তা শেষ হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু তা ব্যালটে নয়, আদালতে। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তিনি নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হন।
সেবার ১৯৯১ সালের পর প্রথমবারের মতো বিএনপি খালেদা জিয়ার নামে ছাপানো ব্যালট ছাড়া নির্বাচনে যায়। ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল দলের। কিন্তু নির্বাচনের মাঠের বদলে তিনি কারাগারে ছিলেন। আর সারা দেশে তার প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়েন।
ছয় বছর পর আবারও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রাখার খবরও গণমাধ্যমে আসে।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খালেদা জিয়া।


Comments