সচেতনতার অভাব ও কুসংস্কারে চট্টগ্রামে বাড়ছে এইডসে মৃত্যুহার

এইডস নিয়ে সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক কুসংস্কার চট্টগ্রামে পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে, যা রোগীদের এইচআইভি পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে বাধা দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংক্রমণের হার ওঠা-নামা করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী দেরিতে চিকিৎসার নিতে আসছেন।

আজ সোমবার বিশ্ব এইডস দিবসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকসহ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংক্রমণের হার বাড়লেও এটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, ১০ বছর আগের তুলনায় এখন বেশি রোগী চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসছেন। তবে মৃত্যুর উচ্চহার দেরিতে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে হয়। রোগী যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন, তত বেশি তার দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা বাড়বে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্ট (এআরটি) সেন্টারের তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সালে ৪৪ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যান একজন। পরের বছর ২০২১ সালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ জন। সেই বছর মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে হয় ছয়জনে। ২০২২ সালে রোগী শনাক্ত হয় ৮৯ জন এবং মারা যান ১৩ জন। ২০২৩ সালে রোগীর সংখ্যা কমে ৫৮-এ নামলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ জনে। 

২০২৪ সালে রোগীর সংখ্যা আবার বেড়ে হয় ৮৪ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা কমে হয় ১১ জন। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।

চমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে সরকারিভাবে এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালটির চর্মরোগ বিভাগ পরিচালিত এ কেন্দ্রটি ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়।

চমেক হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামে এইচআইভি সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও সুসংবাদ হলো—এখন প্রায় সব রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন।

তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ১০ থেকে ১২ বছর আগেও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে এইচআইভি শনাক্ত হওয়ার পর রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসতেন না। এমনকি সমাজের কাছ থেকে, অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও বিষয়টি লুকিয়ে রাখতেন।

তিনি আরও বলেন, তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে এবং রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে তার নিজের ও পরিবারের জন্য উপকার বয়ে আনে।

বাংলাদেশ ডার্মাটোলজিক্যাল সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. সিরাজুল ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীর আয়ু অনেক বছর বাড়তে পারে। আমার একজন রোগী আছেন, তার ১৯৯৪ সালে এইচআইভি শনাক্ত হয়, তিনি এখনও ভালো আছেন। কারণ তিনি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, এইডসের পুরোপুরি নিরাময় নেই, তবে সংক্রমণের পরপরই চিকিৎসা শুরু করলে রোগী অনেক বছর ভালো থাকতে পারেন।

চমেকের চর্মরোগ বিভাগের সাবেক প্রধান ডা. রফিকুল মাওলা ডেইলি স্টারকে বলেন, এইডস মূলত যৌনবাহিত রোগ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত প্রবাসীর সংখ্যা অনেক। তাদের অনেকেই বিদেশে সংক্রমিত হন এবং সচেতনতার অভাবে দেশে ফিরে স্ত্রীকেও সংক্রমিত করেন।

তিনি বলেন, সংক্রমণের হার কমাতে সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

চমেকের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. জুনায়েদ মাহমুদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রবাসী জনসংখ্যাই সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

তিনি বলেন, বিদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং দেশে ফিরে পরীক্ষা না করা—এ দুটি কারণেই এই অঞ্চলে প্রবাসীদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ রোগীর মৃত্যুর কারণ চিকিৎসা নিতে আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে।
 

Comments

The Daily Star  | English

One-third of local private banks keep NPLs below 10%

Seventeen lenders keep healthier balance sheets amid rising industry bad loans through disciplined lending, close monitoring and strong governance

8h ago