উন্নয়নের চাকায় পিষ্ট জীবন: আর কত আবুল কালাম?
শুরুতেই একটি প্রশ্ন করি। একজন সাধারণ পথচারীর জীবন কি বাংলাদেশে উন্নয়নের চেয়ে সস্তা? এই প্রশ্নটি হয়তো নির্মম, কিন্তু গত ২৬ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিলারের ভায়াডাক্ট থেকে যখন একটি বিয়ারিং প্যাড ছিটকে নিচে রাস্তায় পড়ে পথচারী আবুল কালামের জীবন কেড়ে নিল, তখন এই নির্মম প্রশ্নটিই যেন আমাদের বিবেকের দরজায় আঘাত হানে।
আবুল কালামের মৃত্যু কেবল একটি 'দুর্ঘটনা' নয়, বরং এটি কাঠামোগত ব্যর্থতা, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার অনুপস্থিতির একটি স্পষ্ট চিত্র।
২০২২ সালের ১৫ আগস্ট উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ভেতরে থাকা একই পরিবারের পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম, এবার হয়তো কিছু বদলাবে। কিন্তু কিছুই বদলায়নি।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণযজ্ঞে কখনও শ্রমিকের ওপর কনটেইনার, কখনও হকারের ওপর স্টিলের ফ্রেম, আবার কখনও শিশুর ওপর লোহার রড পড়ে মৃত্যুর মিছিল চলছেই। এমনকি সাধারণ নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে ব্যাংক কর্মকর্তা দিপু সানা বা স্কুলছাত্র আবদুল হাফিজের মতো অসংখ্য প্রাণ ঝরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু কেন বারবার এমন ঘটছে? কেন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প বা নির্মাণাধীন স্থাপনা একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে?
আমরা আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখছি, শত শত কোটি টাকা খরচ করে (অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খরচ) বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরি করছি। কিন্তু এই উন্নয়নের মূলে লুকিয়ে আছে এক গভীর নৈতিক সংকট। যদি আমাদের নির্মাণ সংস্কৃতি এমন হয় যে, একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার অত্যাবশ্যকীয় কাঠামোগত উপাদান (বিয়ারিং প্যাড), যা সাধারণত দীর্ঘ দিন (সাধারণত ২০-৩০ বছর) টিকে থাকার জন্য নকশা করা হয়, আর তা মাত্র আড়াই বছর চলার পরই খুলে পড়ে প্রাণহানি ঘটায়, তবে সেই উন্নয়নের স্তম্ভ কতটা মজবুত? এই পুনরাবৃত্ত ট্র্যাজেডি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের নির্মাণখাতে জননিরাপত্তা হলো উপেক্ষিত একটি বিষয়।
মেট্রোরেল: নকশার ত্রুটি না তদারকির দেউলিয়াপনা?
মেট্রোরেল দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ এর ভিতও যে কতটা নড়বড়ে, তা ১৩ মাসের ব্যবধানে একই এলাকায় দুটি বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ার ঘটনায় স্পষ্ট হলো।
এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৪৩০ নম্বর পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। সেসময় কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা না হলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল ১১ ঘণ্টা। সেই ঘটনার পর কী শিক্ষা নেওয়া হয়েছিল? আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কিছুই না। তবে তদন্ত কমিটি হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেলের এই বিয়ারিং প্যাডগুলো রাবার ও স্টিলের যৌগিক উপাদান, যা মূলত কম্পন শোষণ করে এবং তাপমাত্রার কারণে ভায়াডাক্টের প্রসারণ ও সংকোচনে সাহায্য করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এগুলো নাট-বল্টু দিয়ে আটকানো থাকে না, বরং ভায়াডাক্টের বিশাল চাপে নিজ অবস্থানে স্থির থাকে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেছেন, যেখানে ট্রেন বাঁক নেয়, সেখানে চাপ বেশি থাকে। কিন্তু নকশাতেই হয়তো এই অতিরিক্ত চাপের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। ফলে এটি অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে পারেনি।
অন্যদিকে মেট্রোরেলের নকশা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক। তিনি বলেন, বিয়ারিং প্যাডটি বসানো হয়েছে মেট্রোর নিরাপদ চলাচল ও স্থাপনার স্থায়িত্ব ধরে রাখতে। কিন্তু এই ব্যবস্থা নিচে পড়ে মানুষ মারা গেলে তো বলতে হবে এর নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে। মেট্রোরেলের জন্য সবচেয়ে দামি জাপানি পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে তাদের নকশায় কী কোনো ত্রুটি ছিল?
প্রশ্ন ওঠে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের তদারকি সক্ষমতা নিয়েও। ঠিকাদার যখন বিশ্বখ্যাত জাপানের, তখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে ডিএমটিসিএল-এর দায়িত্ব ছিল নকশার সূক্ষ্ম কারিগরি দিকগুলো এবং নিরাপত্তা মান কঠোরভাবে যাচাই করা। কিন্তু একটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটে অভিজ্ঞ প্রযুক্তিগত জনবলের মারাত্মক অভাব ছিল। কর্মকর্তারা পরামর্শদাতাদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল ছিলেন, যার ফলস্বরূপ দুর্বল তদারকি এবং বিদেশি ঠিকাদারের কাজ অন্ধভাবে মেনে নেওয়া হয়।
যদি কর্তৃপক্ষের কাছে নকশার মৌলিক 'ফিজিক্স' যাচাই করার প্রযুক্তিগত দক্ষতা না থাকে, তবে তারা কীভাবে একটি বিশ্বমানের প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে? অভ্যন্তরীণভাবে সমস্যা তৈরি হলেও, তা চিহ্নিত করার মতো সক্ষমতা তাদের নেই।
প্রথম দুর্ঘটনা ঘটার পর যদি কর্তৃপক্ষ এটিকে নকশাগত ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করে সমাধান করত, তবে আবুল কালামের মতো একজন পথচারীকে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না। অতএব, এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক বছরের পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি, যা 'অবহেলাজনিত হত্যা'র নামান্তর।
বিআরটি ট্র্যাজেডি: বেপরোয়া অবহেলায় ৫ প্রাণহানি
মেট্রোরেলের ঘটনা যদি দুর্বল নকশা ও তদারকির ফল হয়, তবে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের বিপর্যয় ছিল চরম অবহেলা এবং নিরাপত্তার প্রতি বেপরোয়া ঔদাসীন্যের একটি ভয়াবহ উদাহরণ। ২০২২ সালের আগস্টে উত্তরায় উড়ালসড়কের একটি বক্স গার্ডার ক্রেন থেকে সরানোর সময় চলন্ত গাড়ির ওপর ধসে পড়ে একই পরিবারের ৫ জন সদস্য নিহত হন।
প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে চীনা ঠিকাদারি সংস্থা চায়না গেঝুবা গ্রুপ করপোরেশনকে দায়ী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা প্রকল্প পরামর্শদাতা বা ট্রাফিক বিভাগ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়েই সরকারি ছুটির দিনে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। ব্যবহৃত ক্রেনটি প্রয়োজনীয় লোড নিতে সক্ষম ছিল না এবং সাইটে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ছিল না।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, কিছু ঠিকাদারের কাছে মুনাফা জনসাধারণের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান। তারা নিরাপত্তার জন্য অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী থাকে না। নিরাপত্তা প্রোটোকল লঙ্ঘন তাদের কাছে একটি 'গণনাকৃত ঝুঁকি' বা 'ক্যালকুলেটেড রিস্ক', অর্থাৎ যদি ধরা না পড়ে, তবে খরচ তো বাঁচলোই; আর ধরা পড়লেও জরিমানা বা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার যে খরচ তার চেয়ে কম।
বিআরটি ট্র্যাজেডির পর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে নিহতদের পরিবারকে জনপ্রতি ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রুল জারি করেছিলেন। কিন্তু মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে নিহত কালামের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জীবনের মূল্য নির্ধারণের এই তারতম্যই আমাদের সমাজকে দেখিয়ে দেয় যে, জননিরাপত্তা এখানে কোনো মৌলিক অধিকার নয়, বরং এটি আলোচনা ও আপসের বিষয়।
যখন অপরাধের জন্য শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের মাত্রা এত দুর্বল থাকে, তখন ঠিকাদার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে বেপরোয়া আচরণ করার প্রবণতা কাজ করে। এই নৈতিক ঝুঁকিকে যতক্ষণ না রাষ্ট্র কঠোরভাবে মোকাবিলা করছে, ততক্ষণ এই ধরনের প্রাণহানি চলতেই থাকবে।
সাধারণ নির্মাণ: যখন নিরাপত্তা কোড নিজেই প্রহসনে পরিণত
মেগা প্রকল্পগুলো যখন নিরাপত্তাব্যবস্থায় ব্যর্থ হয়, তখন সাধারণ নির্মাণ সাইটগুলোর পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। ঢাকায় নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে ইট, কাঠের টুকরো বা রড পড়ে সাধারণ পথচারী মারা যাওয়ার ঘটনা প্রায়শই ঘটে। এর প্রধান কারণ হলো, ঠিকাদার বা নির্মাণপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ব্যয়ে চরম অনীহা। ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জাল ব্যবহারের বিধান থাকা সত্ত্বেও সেগুলো মানা হয় না। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সবাই বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এবং শ্রম আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ করছে।
ঢাকার রাস্তায় হেঁটে দেখুন, কয়টি নির্মাণাধীন প্রকল্পে আপনি এই নিয়ম মানতে দেখবেন?
বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)-এ স্থাপনা নির্মাণের সময় নিরাপত্তাবেষ্টনী ও বেড়া, মজবুত নাইলনের জাল (নিরাপত্তাজাল) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেন নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে কোনো বস্তু পড়ে পথচারী বা শ্রমিকের ক্ষতি না হয়। পাশাপাশি শ্রমিকের নিরাপত্তাব্যবস্থাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কিন্তু এই বাধ্যতামূলক নির্দেশনাগুলো বাস্তবে কোথায়? প্রতিদিন রাজধানীজুড়ে চলা নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলোতে আমরা দেখি উন্মুক্ত গর্ত, অরক্ষিত বাঁশের কাঠামো, আর মাথার ওপরে ঝুলে আছে বিপজ্জনক সরঞ্জাম, নেই নিরাপত্তাবেষ্টনী। কোড আছে, কিন্তু কেউ মানছে না; আর মানতে বাধ্যও নয়, কারণ তদারকি প্রক্রিয়া দুর্বল ও অনিয়মিত।
অন্যদিকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়োগকর্তার ওপর ন্যস্ত করেছে। আইনে স্পষ্ট বলা আছে—শ্রমিকদের হেলমেট, হারনেস, প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৫৭ শতাংশ নির্মাণ শ্রমিক কখনো মৌলিক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণই পাননি।
নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন বাংলাদেশে এখনও 'সামান্য অনিয়ম' হিসেবেই বিবেচিত হয়, গুরুতর অপরাধ নয়। রাজউকের এই আইন প্রয়োগ করার কথা থাকলেও তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের পরিদর্শনের ঘাটতি এবং দুর্নীতির অভিযোগের কথা প্রায় সবাই জানে। যতদিন না আইন বাস্তবায়নের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত প্রতিটি নির্মাণস্থল থাকবে একেকটি সম্ভাব্য মৃত্যুর ফাঁদ। উন্নয়ন চলবে, কিন্তু তার নিচে চাপা পড়বে আরও অনেক জীবন।
একটি জীবনের মূল্য কত?
মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে নিহত আবুল কালামের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে ঘোষণা, সেটি আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের আরেকটি অন্ধকার দিক উন্মোচন করে। রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যখন তার নিজের অবহেলায় ঘটে যাওয়া কোনো মৃত্যুর জন্য এমন 'অনুদান' (ক্ষতিপূরণ) ঘোষণা করে, তখন তা ন্যায়বিচারের পরিবর্তে করুণা প্রদর্শনের সামিল হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের দেশে অবহেলাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের কোনো সুনির্দিষ্ট ও আধুনিক আইন নেই। ফলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আদালতের রায় বা কর্তৃপক্ষের মর্জির ওপর নির্ভর করে।
অতীতে খোলা ম্যানহোলে পড়ে বা হাসপাতালের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় আদালত অনেক উচ্চ অঙ্কের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মৃত্যুর মূল্য এত কম কেন? এই বৈষম্য বলে দেয়, রাষ্ট্র নাগরিকের জীবনের মূল্যায়ন করে পরিস্থিতি আর পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে, নাগরিকের অধিকারের ভিত্তিতে নয়।
আমরা এমন উন্নয়ন চাই না, যা দাঁড়িয়ে থাকে সাধারণ মানুষের রক্তের ওপর। মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক—এগুলো অবশ্যই জরুরি। কিন্তু তারচেয়েও জরুরি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা। আবুল কালামের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদের উন্নয়ন মডেলের কেন্দ্রে মানুষ নেই, আছে কেবল ইট-পাথর-কংক্রিটের হিসাব।
এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তদন্তের নামে প্রহসন বন্ধ করে প্রতিটি মৃত্যুর জন্য দায়ীদের, তারা যত বড় ঠিকাদার বা কর্মকর্তাই হোক না কেন, শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য একটি সম্মানজনক ও আইনসম্মত ক্ষতিপূরণ কাঠামো তৈরি করতে হবে। তা না হলে উন্নয়নের এই চাকায় পিষ্ট হয়ে আরও অনেক আবুল কালাম হারিয়ে যাবে, আর আমরা কেবল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকব।
উন্নয়ন দরকার, কিন্তু মানুষের জীবনের বিনিময়ে নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাগরিকের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আবুল কালামের মৃত্যু কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি আমাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও নৈতিক দায়িত্ববোধের নগ্ন প্রতিফলন। যতদিন আমরা জননিরাপত্তাকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু না বানাতে পারব, ততদিন 'উন্নয়নের ভারে চাপা পড়া জীবন'-এর গল্প চলতেই থাকবে।
তানজিল রিমন, সাংবাদিক ও শিশুসাহিত্যিক


Comments