তাইজুলের ঘূর্ণিজাদু, জ্যামাইকা টেস্টে রোমাঞ্চের হাতছানি

বাংলাদেশ ২৮৬ রানের লিড পাওয়ার পর মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে আঘাত করলেন তাইজুল ইসলাম। আরও দুই শিকার ধরে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার দাপট জারি রাখলেন দ্বিতীয় সেশনেও। তার ঘূর্ণি জাদুর বিপরীতে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে লড়াই করছেন কাভেম হজ। তাই জ্যামাইকায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে রোমাঞ্চকর ফয়সালার হাতছানি মিলছে।

মঙ্গলবার কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে ম্যাচের চতুর্থ দিনের চা বিরতি পর্যন্ত ক্যারিবিয়ানদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৩৩ রান। হজ ৬৩ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৪৯ রানে খেলছেন। তার সঙ্গী জাস্টিন গ্রিভস ক্রিজে আছেন ১৭ বলে ১০ রানে। তাদের অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটির রান ৪৭ বলে ২৭।

দ্বিতীয় সেশনে খেলা হয়েছে ২৯.৪ ওভার। উইন্ডিজ যোগ করেছে ১১০ রান। তাইজুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিকার করেছে ৩ উইকেট। জয়ের জন্য স্বাগতিকদের দরকার আরও ১৫৪ রান, অ্যান্টিগায় আগের টেস্টে হেরে সিরিজে পিছিয়ে থাকা টাইগারদের তুলে নিতে হবে ৬ উইকেট।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা হয় ইতিবাচক। বাংলাদেশের দুই পেসারকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন ওপেনাররা। তাই পঞ্চম ওভারেই আক্রমণে স্পিন আনেন টাইগার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। বোলিং পরিবর্তন নিয়ে আসে সাফল্য। প্রথম সেশনের শেষ বলে ভাঙে ক্যারিবিয়ানদের উদ্বোধনী জুটি।

মিকাইল লুইয়ের ব্যাট ছুঁয়ে জুতায় লেগে তাইজুলের বল উঠে যায় উপরে। শর্ট লেগে অনায়াস ক্যাচ নেন শাহাদাত হোসেন দিপু। বল মাটিতে লেগেছে কিনা তা জানতে মাঠের আম্পায়ার দ্বারস্থ হন তৃতীয় আম্পায়ারের। কয়েকবার রিপ্লে দেখার পর আউটের সিদ্ধান্ত আসে। ১২ বলে ৬ রান করেন লুই।

২৩ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর কেসি কার্টিকে নিয়ে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। নবম ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে যায় ৪৫ রান। তিন ওভার পর আক্রমণে আসেন নাহিদ রানা। তিনি ও তাসকিন আহমেদ মিলে টানা আঁটসাঁট ওভার করতে থাকেন। চাপ তৈরির ফল আসতে বেশি সময় লাগেনি। অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসবন্দি হন কার্টি। ৪৩ বলে তার রান ১৪।

হজ ক্রিজে এসেই সাবলীল ঢঙে খেলতে শুরু করেন। সুযোগ পেলে বাউন্ডারি মারতে দ্বিধা করেননি। তখন আক্রমণ থেকে পেসারদের সরিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে মিরাজ ও তাইজুল বাঁধেন জুটি। ২৫তম ওভারে প্রথম বলে হজের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু তিনি রিভিউ নিলে দেখা যায়, প্যাডে লাগার আগে ব্যাট ছুঁয়ে যায় বল। সিদ্ধান্ত পাল্টে যাওয়ায় বেঁচে যান হজ।

সেই হতাশা ঝেড়ে এক বল পরই তাইজুল মাতেন উল্লাসে। এক প্রান্ত ধরে রাখা ব্র্যাথওয়েট টার্নে পরাস্ত হয়ে আউট হন। ক্যাচ দেওয়ার আগে ৬৩ বলে দুটি চার ও একটি ছয়ে ৪৩ করেন তিনি। স্লিপে থাকা মাহমুদুল হাসান জয় ডানদিকে দৌড়ে লুফে নেন বল।

পরের ওভারের শুরুতে দারুণ ডেলিভারিতে নিজের তৃতীয় শিকার ধরেন তাইজুল। বোল্ড হওয়া আলিক আথানেজ টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করার চেষ্টায় ব্যাট ও প্যাডের মাঝে বিশাল ফাঁকা তৈরি করে ফেলেন তিনি। বিশাল টার্ন নিয়ে বল আঘাত করে স্টাম্পে। ৬ বলে ৫ রানে সাজঘরের পথ ধরেন আথানেজ। চা বিরতির আগে বাকিটা সময়ে আশা জাগালেও আর উইকেট আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থামে ২৬৮ রানে। প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১৮ রানের লিডের সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তারা দিয়েছে ২৮৭ রানের লক্ষ্য। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারসেরা টেস্ট ইনিংসে জাকের আলি অনিক করেন ৯১ রান। টেলএন্ডাররা বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারবেন না বুঝে মেরে খেলার সিদ্ধান্ত ছিল তার। ১০৬ বলে আটটি চার ও পাঁচটি ছক্কা মারেন তিনি।

এই মাঠে অনুষ্ঠিত টেস্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড স্বাগতিকদেরই। ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১২ রানের লক্ষ্যে নেমে জিতেছিল তৎকালীন ব্রায়ান লারার নেতৃত্বাধীন দল। এই ম্যাচ জিততে হলে সেই কীর্তি ছাড়িয়ে যেতে হবে এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

Comments

The Daily Star  | English
US wants Bangladesh trade plan,

Reducing US trade GAP: Dhaka turns to Boeing, wheat imports

Bangladeshi officials are preparing for a third round of talks in Washington next week

7h ago