প্রথম যাত্রায় অধিনায়করা, ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকির পালা

যেকোনো খেলায় অধিনায়কের দায়িত্ব বড় কোনো টুর্নামেন্টের ঝলমলে আলোয় বহুগুণে বেড়ে যায়। বিশেষ করে যদি সেই অধিনায়ক আগে কখনো এমন আসরে নেতৃত্বের চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতা না রাখেন, তাহলে সেটি তাকে আরও বড় অসুবিধায় ফেলার কথা।

কিন্তু এশিয়া কাপে এ যুক্তি খাটে না। কারণ এখন পর্যন্ত আয়োজিত ১৬ আসরের মধ্যে নয়বারই নতুন অধিনায়ক প্রথমবার নেতৃত্ব দিয়েই শিরোপা জিতেছেন।

সুনীল গাভাস্কার, দিলীপ ভেঙ্গসরকার, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, মারভান আতাপাত্তু, মাহেলা জয়বর্ধনে, মিসবাহ-উল-হক, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, রোহিত শর্মা ও দাসুন শানাকা—এরা সবাই নিজেদের প্রথম চেষ্টাতেই শিরোপা ছুঁয়ে দেখেছেন।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হতে যাওয়া ১৭তম আসরে কার হাতে ট্রফি উঠবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এবার সেই তালিকায় আরও একটি নতুন নাম যুক্ত হবে। কারণ এবারের এশিয়া কাপে অংশ নেওয়া আট দলের আটজনই প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব করছেন।

ভিন্ন রকম লক্ষ্য

এশিয়া কাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই আসরে খেলছে আট দল —বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, হংকং, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

প্রত্যেক অধিনায়কই নামবেন ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে, কিছু ব্যক্তিগত, কিছু দলগত।

অ্যাসোসিয়েট তিন দলের অধিনায়ক হংকংয়ের ইয়াসিম মুর্তজা, ওমানের যতিন্দর সিং এবং আমিরাতের মোহাম্মদ ওয়াসিমদের জন্য এক–দুটি অঘটনই হবে বড় প্রাপ্তি। আর যদি সুপার ফোরে উঠতে পারেন, সেটি হবে ঐতিহাসিক সাফল্য।

কিন্তু পূর্ণ সদস্য পাঁচ দলের লক্ষ্য স্বাভাবিকভাবেই আলাদা।

নতুন উচ্চতায় চোখ

২০১৬ ও ২০২২ সালের পর তৃতীয়বারের মতো এবারের এশিয়া কাপ বসছে টি–টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

বাংলাদেশ আগের দু'বারই খেলেছিল। ২০১৬ সালে তো ফাইনালেও উঠেছিল। তবে ওই দুই আসরের কোনোটিতেই টাইগারদের বর্তমান অধিনায়ক লিটন দাস ছিলেন না দলে।

৩০ বছর বয়সী লিটন এবার আসরে নামছেন দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে। মাসের শুরুতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে করেছেন ১৪৫ রান। দলও আছে সাফল্যের ধারায়, টানা তিনটি টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে তারা; শ্রীলঙ্কা (২–১), পাকিস্তান (২–১) ও নেদারল্যান্ডস (২–০)।

লিটনের মূল লক্ষ্য থাকবে তিনবারের রানার্স–আপ বাংলাদেশকে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া। ব্যক্তিগতভাবে তার ইচ্ছা বিশ্বমঞ্চে নিজের মান প্রমাণ করা।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

তবে তার আগে সামলাতে হবে বিপজ্জনক গ্রুপ–বি। যেখানে শ্রীলঙ্কা ও হংকংয়ের পাশাপাশি আছে রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন ভয়ংকর আফগানিস্তান।

সদ্য গত বছরই রশিদের নেতৃত্বে আফগানরা প্রথমবারের মতো পৌঁছেছিল আইসিসি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।

আমিরাতের পরিচিত কন্ডিশন এবার তাদের আরও সাহায্য করবে। তাই এই আসরে তারা বড় স্বপ্ন দেখছে -শিরোপা জয়ের।

পুনর্গঠন ও পুনরুত্থান

মাত্র ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি–টোয়েন্টিতেই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া সালমান আলি আঘা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন নতুনভাবে নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করা পাকিস্তানকে।

তার নেতৃত্বে সিরিজ হেরেছে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের কাছে (অ্যাওয়ে), তবে আশার আলো জ্বেলেছে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে।

তবুও সালমানের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৮.৩২। যা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, কারণ এটি প্রধান কোচ মাইক হেসনের সাহসী ক্রিকেটের পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চরিথ আসালঙ্কার সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়েও শঙ্কা আছে। শেষ ১০ ইনিংসে ছয়বারই তিনি দুই অঙ্কের স্কোর করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তবুও তার হাতে রয়েছে একাধিক টি–টোয়েন্টি তারকা। লক্ষ্য থাকবে বড় আসরে নিজেদের নামের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং সপ্তম এশিয়া কাপ শিরোপা ঘরে তোলা।

মুকুটের ভার

ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবারের সবচেয়ে শক্তিশালী দলকে। তারা শিরোপা ধরে রাখার প্রধান দাবিদার।

যদিও ভারতের প্রস্তুতি খানিকটা উদাসীন মনে হচ্ছে, কারণ তারা আসরের আগে কোনো টি–টোয়েন্টি খেলেনি। অনেকেই মনে করছেন, ভারতের কাছে এশিয়া কাপ আসলে আগামী বছরের আইসিসি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি মাত্র।

তবুও সূর্যের জন্য ঝুঁকি যথেষ্ট বড়। কারণ টেস্ট অধিনায়ক শুভমান গিলকে ইতোমধ্যেই ভারতের ভবিষ্যৎ সর্বাঙ্গীণ অধিনায়ক হিসেবে ভাবা হচ্ছে। তাই সূর্যের ওপর চাপ থাকবে ভারতের নবম এশিয়া কাপ ট্রফি জেতার। ব্যর্থ হলে আগামী বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়তো হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে তার।

Comments

The Daily Star  | English

Shibir-backed candidates Shadik, Farhad leading in top two Ducsu posts

Counting going on till 6:00am; turnout 78% in polls marked by festivities

5h ago