সেডান নাকি হ্যাচব্যাক, চিনবেন কীভাবে

সেডান নাকি হ্যাচব্যাক, চিনবেন কীভাবে
ছবি: সংগৃহীত

মানবসভ্যতার সাম্প্রতিক জীবনধারায় অতিপ্রয়োজনীয় বাহন হিসেবে গাড়ির রয়েছে নানামুখী ধরন। যেগুলোর সঠিক নাম কিংবা নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা অনেকের জন্যই কঠিন। ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে একে মালবাহী, যাত্রীবাহী, কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িসহ বেশকিছু নামে চিহ্নিত করা হয়। সেডান এবং হ্যাচব্যাক এগুলোর মধ্যে অন্যতম দুটো যাত্রীবাহী গাড়ি। 

বাস, মিনিবাস, মাইক্রো-বাস, ট্রাক, মিনি-ভ্যান, অফরোডার, কনভার্টেবল, কিংবা এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল) অনেকের কাছে পরিচিত হলেও যখন বলা হয় হ্যাচব্যাক থেকে সেডানকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে, তখন বিষয়টা আর সহজ থাকে না। দেখতে প্রায় একই রকম হওয়াতে এদের নির্দিষ্ট নাম, সুবিধা-অসুবিধা, কিংবা ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আজকের আলোচনাতে এই বিভ্রান্তি দূর করার পাশাপাশি হ্যাচব্যাক ও সেডানের মূল বৈশিষ্ট্য এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

১৯২৮ সালের ফোর্ড মডেল এ টুর্ডো সেডান। ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

সেডান কার। ছবি: টয়োটা

সেডান

বাংলাদেশের রাস্তায় সবচেয়ে বেশি যে ব্যক্তিগত গাড়িটি চোখে পড়ে, সেটি হচ্ছে সেডান। অনেকের কাছে অবশ্য এটা ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবেই পরিচিত। সেডান বলতে একটি পৃথক ট্রাঙ্কসহ ৪ দরজার একটি যাত্রীবাহী গাড়িকেই বোঝানো হয়৷ ট্রাংক বলতে গাড়ির পেছনের অংশে সম্পূর্ণ আবদ্ধ স্থানটিকে বুঝায়, যেখানে সাধারণত যাত্রীদের মালামাল রাখা হয়। এ ছাড়া একটি সেডান গাড়িতে ৩টা অংশ থাকে। 

সামনের অংশে গাড়ির ইঞ্জিন, মাঝের অংশ সবচেয়ে বেশি স্থানজুড়ে অবস্থিত অংশ যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ, এবং পেছনের অংশটি ট্রাংক। সেডান গাড়িতে ৪টা দরজা থাকে। যাত্রীদের জন্যে ২টা সারি থাকে, সামনের সারিতে চালকের আসন থাকবে আর পেছনে কেবল যাত্রী বসতে পারে। 

এমন বৈশিষ্ট্যের গাড়ি ব্রিটিশদের কাছে সেলুন নামে পরিচিত। তবে, বিশ্বজুড়ে এটা সেডান নামেই পরিচিতি পেয়েছে। সেডান শব্দটির উৎপত্তি আসলে তারও আগে। ১৭ শতকের সেডান চেয়ার নামে এক ধরনের চেয়ার খুব পরিচিত ছিল, জানালাসহ এক ব্যক্তিকে বহন করা একটা বাক্স, যা কুলি বা অন্য কোনো বহনকারী সেটা বহন করতেন। যা উপমহাদেশের অতি পরিচিত পালকির সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। 

মার্কিন ঐতিহাসিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি স্টুডবেকার ১৯১২ সালে বিশ্বের প্রথম সেডান গাড়ির বাজারজাত করেছিল। বাংলাদেশের সড়কে অতি পরিচিত টয়োটা প্রিমিও, অ্যালিওন সেডান গাড়ি। 

হ্যাচব্যাক কার। ছবি: টয়োটা

হ্যাচব্যাক 

দেখতে অনেকটা সেডানের মতো হলেও হ্যাচব্যাক গাড়ির কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছোট ট্রাংক। যাত্রী আসনের ঠিক পেছন থেকেই এই ট্রাংক শুরু হয়েছে। ট্রাংকের দরজা ওপরের দিকে খুলে যা আবার ভেতর থেকেই দেখার সুযোগ রয়েছে। একটি হ্যাচব্যাক গাড়িতে ৩ থেকে ৫টি পর্যন্ত দরজা থাকতে পারে। হ্যাচব্যাক মূলত সাশ্রয়ী, ক্ষুদ্র একটি গাড়ি। চালকরা সাধারণত এই গাড়িকে উপহাস করে 'ইকোনোবক্স' বলে থাকে।

অন্যদিকে, এই গাড়িকে ২ অংশ বা ২ বাক্সের গাড়ি বলা হয়, যার সামনের অংশে ইঞ্জিন এবং পেছনের অংশ যাত্রী ও মালপত্র রাখার স্থান। অর্থাৎ, ক্ষুদ্র ট্রাংকের জন্য আলাদা করে কোনো অংশ ছিল না। হ্যাচব্যাকের পেছনের দরজাটা ওপরের দিকে উঠে যায়, যাকে হ্যাচ বলা হয়। 

ফ্রান্সের বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা সিট্রোয়েন ১৯৩৮ সালে বিশ্বের প্রথম হ্যাচব্যাক গাড়ি বাজারজাত করেছিল। যা সিট্রোয়েন ১১সিভি কমার্শিয়াল নামে পরিচিত। প্রথম দিকে এই গাড়ির বাজার ছিল কসাই, বেকার, ভিন্টনার এবং মুদি দোকানীর মতো ব্যবসায়ীরা। যাদের ভারী জিনিসপত্র বহন করার প্রয়োজন পড়তো। সাধারণ হ্যাচব্যাক গাড়ির মধ্যে টয়োটা ফিল্ডার, প্রোবক্স বেশ বিখ্যাত।

নতুন প্রজন্মের হ্যাচব্যাক

কালের পরিক্রমায় হ্যাচব্যাকের নকশা বদলে গেছে। বর্তমানের হ্যাচব্যাকগুলোকে আর ইকোনোবক্স বলে পরিহাসের সুযোগ নেই। আধুনিক নকশার এই গাড়িগুলো এখন অনেক স্টাইলিশ, যা দারুণ নকশায় নির্মিত। নতুন প্রজন্মের হ্যাচব্যাক গাড়িগুলো অনেক ক্ষেত্রে চার দরজা বিশিষ্ট সেডানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেখানে বেশ বড় আকারের একটি ট্রাংক আছে। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের হ্যাচব্যাকের ছাদেও একটি ছোট ট্রাংক থাকতে পারে। এগুলো দেখতে অনেকটা অতীতের ২ দরজা বিশিষ্ট স্পোর্টস কুপ বা স্পোর্টস গাড়িগুলোর মতো। 

মাজদা হ্যাচব্যাক। ছবি: সংগৃহীত

এই গাড়িগুলো কমপ্যাক্ট বা মাঝারি আকারের স্পোর্টি বা বিলাসবহুল গাড়ি হয়ে থাকে। মার্কেটিংয়ের খাতিরে এসব গাড়িকে মাম্বো-জাম্বো বলা হলেও একটা বিষয় নিশ্চিত যে এই রেসি গাড়িগুলো আসলেই হ্যাচব্যাক৷ নতুন হ্যাচব্যাকের মধ্যে রয়েছে মাজদা ৩, হোন্ডা সিভিক স্পোর্ট, হোন্ডাই এলানট্রা জিটি, টয়োটা করলা, অডি এ৫ স্পোর্টবুক এবং এ৭সহ মার্সিডিজ এএমজি জিটি৫৩ এর মতো গাড়ি রয়েছে।

কার্গো ধারণক্ষমতা

হ্যাচব্যাক এবং সেডানের দৃশ্যগত পার্থক্য যাই-ই থাকুক না কেন সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে তাদের আপেক্ষিক পণ্য পরিবহণ ক্ষমতার মধ্যে। সাধারণ একটা গাড়ির চেয়ে একটা হ্যাচব্যাক বডি স্টাইলের গাড়িতে সেডানের চেয়ে অধিক পণ্য বহন করতে পারে। একই সঙ্গে হ্যাচব্যাকে সেডানের চেয়ে মালামাল সহজে লোড ও আনলোড করা যায়।
 
এ ছাড়া, হ্যাচব্যাক গাড়ির ট্রাংকের ফ্লিপ-আপ দরজার কারণে সেডানের চেয়ে তুলনামূলক লম্বা মালামাল ঢুকানো ও বের করা যায়। যাত্রী আসন তুলে সেডানের চেয়ে বেশি মালামাল ও বহন করা যায়। হ্যাচব্যাকের ট্রাংকে মাল বহন অনেকটা এসইউভি'র মতো। 

অন্যসব গাড়ির মতো হ্যাচব্যাকেরও রয়েছে কিছু অসুবিধা। যার মধ্যে একটি হচ্ছে এর কার্গো কভার না থাকা। ফলে, গাড়ির পেছনে যা থাকবে তা পথচারীরাও দেখতে পাবে। কভার না থাকার ফলে সেডানের তুলনায় এই গাড়ির ভেতরে শব্দও বেশি হয়, বাইরের শব্দ ভেতরে বেশি প্রবেশ করতে পারে। শেভিজের ক্রুজ এবং ফোর্ডের ফোকাসের উৎপাদন বন্ধের পরে আর তেমন কোনো গাড়ি কোম্পানিই একই মডেলের সেডান ও হ্যাচব্যাক বের করেনি। এই গাড়ি দুটোতেই সেডান ও হ্যাচব্যাকের সুবিধা মিলতো। 

তথ্যসূত্র: কার অ্যান্ড ড্রাইভার, দ্য নিউজ হুইল

গ্রন্থনা: এস এম সোহাগ

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

2h ago