দেশে বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায়

বিলাসবহুল গাড়ি
বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি দামি গাড়ি বিক্রির অনুকূল নয়। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার ফাইল ফটো

চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও আকস্মিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেশে গত জুলাই থেকে বিলাসবহুল সেডান ও স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেলের (এসইউভি) বিক্রি প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে প্রতি মাসে ৮০০-র মতো গাড়ি বিক্রি হতো। এখন বিক্রি কমেছে ৯৫ শতাংশ।

এই দাবির পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য না থাকলেও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বলছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ৭৩৪টি এসইউভি নিবন্ধিত হয়েছে।

বিআরটিএ সাধারণ গাড়ি হিসেবে সেডান গাড়ি গণ্য করায় অন্যান্য দামি গাড়ির নিবন্ধনের বিষয়ে আলাদা পরিসংখ্যান নেই।

এছাড়াও, নতুন গাড়ি নিবন্ধনে দেরি করা ব্যক্তিরা এসব পরিসংখ্যানে বাদ পড়েন।

প্রোগ্রেস মোটরস'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ নুসরাত খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত জুলাই থেকে একটি গাড়িও বিক্রি হয়নি।'

রাজনৈতিক পালাবদল ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির তেজগাঁও বিক্রয়কেন্দ্রে কোনো ক্রেতা আসেননি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত জুলাই থেকে প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।'

পরিচালন খরচ মেটাতে প্রতি মাসে অন্তত ছয়টি গাড়ি বিক্রি করতে হয় বলেও জানান তিনি।

বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিবেশ দূষণ না করলেও সম্প্রতি বিআরটিএ এসবের ওপর কার্বন কর আরোপ করায় দামি গাড়ির সামগ্রিক বিক্রি আরও কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অডি এজির ডিজাইন করা বিলাসবহুল গাড়ির একমাত্র পরিবেশক প্রোগ্রেস মোটরস এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা থেকে তিন কোটি ৯৯ লাখ টাকায় গাড়ি বিক্রি করে।

সে হিসেবে এসব গাড়ি শুধু বিত্তবানরাই কেনেন।

তিনি মনে করেন, চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ধীরগতি আসায় বিলাসবহুল পণ্যের পেছনে অনেকে এত টাকা খরচ করার অবস্থায় নেই।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতি নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। গত জুলাই থেকে বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি অনেক কমেছে।'

তার দৃষ্টিতে, সম্ভাব্য ক্রেতারা গাড়ির কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

'ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রেতারা আতঙ্কে আছেন,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

টয়োটা ক্যামরি ও টয়োটা ক্রাউনের মতো দামি গাড়ির পরিবর্তে ক্রেতারা টয়োটা অ্যাক্সিও ও টয়োটা করোলার মতো একটু কম দামের সেডান গাড়ি কিনছেন বলে জানান হাবিব উল্লাহ ডন।

টয়োটার ল্যান্ড ক্রুজার, পাজেরো ও হ্যারিয়ার সিরিজের গাড়ি বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায়।

বারভিডার সভাপতি আরও বলেন, 'আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় দামি গাড়ির দাম আরও বেড়েছে।'

'ফলে গত দুই মাসে এসব গাড়ির দাম তিন থেকে চার লাখ টাকা বেড়েছে।'

হাবিব উল্লাহ ডনের ভাষ্য, 'এটি সুখবর যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিন দিন ভালো হচ্ছে। আগামীতে ক্রেতারা শোরুমে আসতে আরও স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।'

'বিক্রি কমে যাওয়ায় গাড়ি ব্যবসায়ীরা পরিচালন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আশাবাদী। যেমনটি করোনা মহামারির পর হয়েছিল।'

এইচএনএস অটোমোবাইলসের হেড অব অপারেশনস শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেউ কল্পনাও করেননি যে হঠাৎ করে বাজারে এতটা মন্দা দেখা দেবে।'

তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দামি গাড়ির ক্রেতারা হয়ত তুলনামূলক কম দামের গাড়ি কিনবেন।'

'গাড়ি কেনায় ঋণের উচ্চ সুদের হার গাড়ি বিক্রিকে নিরুৎসাহিত করতে পারে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পর্যাপ্ত টাকার অভাবে কয়েকজন ডিলার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তাদের আমদানি করা গাড়ি খালাস করতে পারছেন না।'

মোটরস বে'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বিপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন।'

'সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সম্ভাব্য ক্রেতারা আর্থিকভাবে সতর্ক থাকায় সামগ্রিক পরিস্থিতি দামি গাড়ি বিক্রির অনুকূল নয়,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Trend of Net Cropped Area in Bangladesh

Shrinking cropped area raises food security concerns

Bangladesh’s net cropped area, the total land sown with crops during a particular agricultural year, has been declining over the past few years, raising concerns among agricultural officials and experts about food security for the growing population.

11h ago