সাংবাদিকদের সহায়তা করতে নতুন এআই টুল তৈরি করছে গুগল

গুগল বলেছে, ‘এই টুল সংবাদ তৈরি, রিপোর্টিং এবং ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ক্ষেত্রে সাংবাদিকের অত্যাবশ্যক ভূমিকাকে প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি এবং এআইর পক্ষে তা সম্ভবও হবে না।’ ছবি: সংগৃহীত
গুগল বলেছে, ‘এই টুল সংবাদ তৈরি, রিপোর্টিং এবং ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ক্ষেত্রে সাংবাদিকের অত্যাবশ্যক ভূমিকাকে প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি এবং এআইর পক্ষে তা সম্ভবও হবে না।’ ছবি: সংগৃহীত

গুগল জানিয়েছে, তারা এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) টুল তৈরির কাজ করছে, যা সাংবাদিকদের সংবাদ ও শিরোনাম লেখার কাজে সহায়তা করবে। বিশ্বের শীর্ষ এই প্রযুক্তি কোম্পানিটি বলেছে, এই উদ্যোগ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

সাংবাদিকতা খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে বলে জানিয়েছে গুগল।  

গুগলের এই উদ্যোগে বিশ্বাসযোগ্যভাবে নির্ভুল সংবাদ পাওয়া যাবে কী না, বা ইতোমধ্যে আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যেতে থাকা সাংবাদিকতা খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে কিনা, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

প্রতিথযশা সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউজ কর্পোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরকে এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে গুগল।

এক বিজ্ঞপ্তিতে গুগল জানিয়েছে, কোনো সংবাদের আর কী কী শিরোনাম হতে পারে বা লেখাটি আর কোন কোন আঙ্গিকে লেখা সম্ভব, সে বিষয়ে সহায়তা পাওয়া যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই টুলের সাহায্যে। গুগলের দাবি, এই এআইর ব্যবহারে সাংবাদিকদের কার্যকারিতা বাড়বে।

গুগল বলেছে, 'এই টুল সংবাদ তৈরি, রিপোর্টিং এবং ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ক্ষেত্রে সাংবাদিকের অত্যাবশ্যক ভূমিকাকে প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি এবং এআইর পক্ষে তা সম্ভবও হবে না।'

বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, তারা প্রায় ১ দশক ধরে কিছু রুটিন কাজে প্রাথমিক পর্যায়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিচ্ছে। যেমন- নিয়মিত খেলার ফলাফল ও কর্পোরেট আয়ের প্রতিবেদন তৈরিতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার সাহায্য নিচ্ছে তারা। তবে গুগলের এই প্রযুক্তি নিয়ে তাদের ধ্যানধারণা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি এপি।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সংবাদিকদের প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিজেদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবার গুণগত মান বাড়াচ্ছে, কিন্তু বিনিময়ে তারা সাংবাদিকদের প্রাপ্য পাওনা দিচ্ছে না বলে বিতর্ক আছে। 

মানুষের মতো লিখতে পারে, এমন এআই সিস্টেম তৈরির জন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে অসংখ্য সংবাদ প্রতিবেদন, ডিজিটাল বইসহ বিশাল লেখার উপকরণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। এআই প্রযুক্তিগুলো এসব প্রকাশিত সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবহারকারীকে প্রদর্শন করে। সব প্রতিষ্ঠান এসব সূত্র উল্লেখও করে না। কিছু কিছু তথ্য আবার ইন্টারনেট থেকেও সংগ্রহ করা হয়।

সম্প্রতি এপি এবং চ্যাটজিপিটির নেপথ্যের প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই একটি চুক্তি করেছে, যার ফলে চ্যাটজিপিটি এপির ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সব সংবাদের আর্কাইভ ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু কত অর্থের বিনিময়ে এই চুক্তি হয়েছে, তা কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি।

রোবট সাংবাদিক। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
রোবট সাংবাদিক। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তি লেখার স্টাইল ও ভিজ্যুয়াল আর্ট অনুকরণের কাজে চ্যাটজিপিটি ও গুগল বার্ডের মতো জেনারেটিভ এআই ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে এই জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি মাঝে মাঝেই ভুল তথ্য উপস্থাপন করে। ফলে সংবাদ ও মেডিকেল পরামর্শের জন্য এসব প্রযুক্তির উপর নির্ভর করাটা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।

আধুনিক এআই প্রযুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই গুগল সতর্কতা অবলম্বন করে এসেছে। গুগল সার্চ ইঞ্জিনেও এআই প্রযুক্তি যোগ করার ক্ষেত্রে এই সতর্কতা অবলম্বন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে চ্যাটজিপিটির অভাবনীয় উত্থান, জনপ্রিয়তা ও মাইক্রোসফটের সার্চ ইঞ্জিন বিং এর সঙ্গে এটি যুক্ত হওয়ার কারণে নিজেদের এআই প্রযুক্তি চালুর চাপে পড়েছে গুগল।

পয়েন্টার ইনস্টিটিউটের সাংবাদিকতার নৈতিকতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কেলি ম্যাকব্রাইড মনে করেন, গুগলের আলোচ্য প্রযুক্তি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে। যেমন- জনসভা বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো অনুষ্ঠানের সূচি এবং সেখানে কী হচ্ছে তার বর্ণনা তৈরি করা। ফলে এসব কাজে আর সাংবাদিকদের প্রয়োজন হবে না।

তবে তিনি বলেন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো যদি নতুন একটি লাভজনক ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করার আগেই এই প্রযুক্তির দ্রুত উত্থান হয়, তাহলে সাংবাদিকদের চাকরি হুমকির মুখে পড়বে।

এজন্য নিউজ মিডিয়া গিল্ডের মতো সাংবাদিকদের ইউনিয়নগুলো গুগলের এই প্রযুক্তির বিকাশের দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি রাখছে।

নিউজ মিডিয়া গিল্ডের প্রেসিডেন্ট ভিন চেরউ বলেন, 'আমরা সবাই এমন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পক্ষে যা রিপোর্টার এবং সম্পাদকদের কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক। কিন্তু তাদের কাজ এআই করে দিক, এটি আমরা চাই না।'

'তাদের চাকরি রক্ষা করা এবং সাংবাদিকতার মানদণ্ড অক্ষুন্ন রাখাটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,' তিনি বলেন।

প্রোপাবলিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডিক টোফেল বলেন, সংবাদ লেখার যোগ্যতার বাইরেও এই প্রযুক্তির আরও কী কী সম্ভাবনা আছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত সাংবাদিকদের। ইতিমধ্যে সীমিত সম্পদ থাকা সত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডেটা জার্নালিজম ও ভিন্ন ভাষায় সংবাদ তৈরি করছে।

তিনি মনে করেন, প্রযুক্তি তাদেরকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা উপেক্ষা করা উচিত হবে না সংবাদমাধ্যমগুলোর।

১৯৯০ এর দশকে যখন ইন্টারনেট আসলো, তখন অনেক সংবাদমাধ্যম ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিল। বিষয়টা অনেকটা সেরকম বলে মনে করেন ডিক টোফেল। 

তিনি বলেন, প্রযুক্তি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে, তবে নির্বোধের মতো নয়।

সূত্র: এপি

গ্রন্থনায়: আহমেদ হিমেল 

Comments

The Daily Star  | English
Peanut farming Bangladesh

The peanut power

From char farmers to street vendors and factories, a small crop feeds many

14h ago