ফটোগ্রাফি থেকে আয় করবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

হাতে ভালো মানের ক্যামেরা বা স্মার্টফোন থাকলে সবারই একটু-আধটু ফটোগ্রাফির শখ জাগে। কেউ আবার ফটোগ্রাফিতে বেশ ভালো দক্ষতা অর্জন করে পেশাদার ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও স্বপ্ন দেখেন। তবে, কীভাবে শুরু করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে সঠিক নির্দেশনার অভাবে সেই ইচ্ছাটা অনেকের কাছে অধরা হয়ে থেকে যায়। 

এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আয়ের বিভিন্ন উপায় নিয়ে থাকছে আজকের আয়োজন।   

ক্লায়েন্টের জন্য ফটোগ্রাফি

ফটোগ্রাফি থেকে অর্থ উপার্জনের শুরুটা হতে পারে অন্যের ছবি তোলার মাধ্যমে। কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের ছবি কিংবা বিয়ের ফটোশ্যুট করে একদিকে যেমন সুনাম অর্জন করা যায় তেমনি আয়ও করা যায়। 

তবে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পুঁজি হলো নেটওয়ার্কিং। এজন্য এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, খোঁজ-খবর রাখা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিজের পরিচিতিও যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ছবির মার্কেটিংও করা হবে। 

এ ছাড়া নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরির মাধ্যমে ক্লায়েন্ট কী ধরনের সুবিধা পাবে ফটোগ্রাফার হিসেবে সেসবের পোর্টফোলিও সার্চ ইঞ্জিনে জায়গা করে দেওয়া যেতে পারে। পরবর্তীতে পছন্দ অনুযায়ী ফটোগ্রাফির নির্দিষ্ট সেক্টরে শিফট করতে চাইলে বাড়তি ঝামেলা এড়ানো যাবে। 

ইউটিউব চ্যানেল শুরু করা

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একই সঙ্গে শখ পূরণ ও অর্থ উপার্জন করার জন্য ইউটিউবের বিকল্প নেই। ফটোগ্রাফির বিভিন্ন ট্রিকস, দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও, মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের ছবি ইত্যাদি চ্যানেলের কনটেন্ট হিসেবে প্রচার করলে ফটোগ্রাফির একটি মার্কেটিং টুল হিসেবে বেশ কাজে দেয়। 

এ ছাড়া ইউটিউবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে অন্তত ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ৪ হাজার ওয়াচ আওয়ার প্রয়োজন হবে, যা দীর্ঘকালব্যাপী প্রজেক্ট হিসেবে কাজ করবে। তাই ইউটিউব চ্যানেল ব্যক্তিত্ব উপস্থাপনেরও উপায় হতে পারে। 

প্রিসেট বিক্রি করা 

ছবি এডিট করার ক্ষেত্রে প্রিসেট যোগ করার সুবিধা যোগ হয়েছে অনেক আগেই। এটি পোস্ট-প্রোডাকশন ওয়ার্কফ্লোকে মসৃণ করার পাশাপাশি, ফটোগ্রাফি থেকে অর্থ উপার্জনের আরেকটি সম্ভাবনা তৈরি করেছে। 

এ ক্ষেত্রে প্রিসেটগুলো অ্যাডোবি লাইটরুম অ্যাপে তৈরি করে এক্সপোর্ট অপশনের মাধ্যমে অন্যের কাছে পাঠানো যাবে। এ ছাড়া নিজস্ব অনলাইন স্টোর বা ইটসি মার্কেটপ্লেসে প্রিসেটগুলো তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে। তারপর কেউ সেগুলো কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ডাউনলোডেবল ফরম্যাট ফাইলে পাঠানো যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রিসেটগুলো ফটোগ্রাফারের স্বতন্ত্র শৈলীর প্রসার ঘটাবে। 

ফটোগ্রাফি নিয়ে লেখালিখি 

ফটোগ্রাফি বিষয়ে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে যেমন কেউ আয় করছেন, তেমনি একজন ফটোগ্রাফারও এভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। 

সত্যিকার অর্থে, ফটোগ্রাফি এমনই একটি স্কিল যার প্রতি মানুষের আগ্রহের অভাব নেই। অনেকের কাছে ভিডিও দেখার চেয়ে আর্টিকেল পড়ে তথ্য সংগ্রহ করাটা বেশি সহজ মনে হয়। আর এজন্য বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু একটি ক্যামেরা নিয়ে লিখিত বিষয়গুলো আগে একবার চেষ্টা করে নিলেই চলে। 

এ ছাড়া জ্ঞাত বিষয়গুলো অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য বেশকিছু ওয়েবসাইট এবং প্রিন্ট ম্যাগাজিন অর্থ প্রদান করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সুন্দর ও সহজবোধ্য শব্দে বাক্য সন্নিবেশ করার দক্ষতা থাকা আবশ্যক। তবে ইংরেজি ভাষায় ভালো দখল না থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। যে ভাষাতে পারদর্শিতা আছে তা দিয়েই চেষ্টা করা যাবে। 

ফটোগ্রাফি ট্যুরের আয়োজন

পর্যটকরা নতুন কোনো জায়গায় গেলে তারা সে জায়গা সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চান। সে ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফি ট্যুর হোস্ট করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সুযোগ লুফে নেওয়া যেতে পারে। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওয়েবসাইটে বুকিং লিঙ্কের মাধ্যমে ফটোগ্রাফি ট্যুরের বিজ্ঞাপন দেওয়া এবং এয়ারবিএনবিতে নিজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করা যেতে পারে। এ ছাড়া নতুন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য সবাই নিজেদের ছবি তুলতে চায়। এ ক্ষেত্রে ফটোশ্যুট করার সুযোগ বাদ যাবে কেন? 

কোর্স চালু করা

ফটোগ্রাফি সেক্টরে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর অন্যকে হাতে-কলমে শেখানোর মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করা যায়। এ ক্ষেত্রে অনলাইন ভিডিও কোর্স ছাড়াও সরারসি কোচিং করানো যেতে পারে। বাজারে অনেক ভালো কোচ আছে বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ ব্যক্তিভেদে সবার পছন্দ, অভিজ্ঞতা, শিখনশৈলী আলাদা হয়। তাই শিক্ষার্থী পাওয়াটা খুব অসম্ভবও নয়। 

স্টক ওয়েবসাইটে ছবি পাঠানো 

বর্তমানে অনেক স্টক ওয়েবসাইট বিনামূল্যে ছবি সংগ্রহ করার সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে অনেক সময় প্রয়োজনমাফিক আকর্ষণীয় ছবি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই অনেকে গেটি ইমেজ বা শাটারস্টকের পেইড ছবি নেওয়ার বিকল্প সুবিধা গ্রহণ করেন। 

এ ক্ষেত্রে এসব ওয়েবসাইটে ছবি পাঠানো যেতে পারে। শুরুর দিকে অবশ্য খুব বেশি আয় করা সম্ভব হয় না, তবে ট্র্যাকে চলে আসলে বেশ ভালো উপার্জন করা যায়। তাই স্টক ওয়েবসাইট আরেকটি উপায় হতে পারে। তবে ছবি পাঠানোর সময় তাদের তথ্যগুলো খুব ভালো করে অনুসরণ করতে হবে।  

 

তথ্যসূত্র: মেইক ইউজ অব, ফরম্যাট

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া 
 

Comments

The Daily Star  | English

‘This fire wasn’t an accident’: Small business owner’s big dreams destroyed

Once a garment worker, now an entrepreneur, Beauty had an export order ready

4h ago