ভালো ফটোগ্রাফির ৫ গুরুত্বপূর্ণ টিপস

ভালো ফটোগ্রাফির ৫ গুরুত্বপূর্ণ টিপস
ছবি: সংগৃহীত

আলো-ছায়ার খেলায় তৈরি হওয়া এক একটি আলোকচিত্রের জন্মের পেছনে থাকে নির্দিষ্ট সময়কে সঠিক ফ্রেমে বাঁধতে পারার কারিকুরি। ফটোগ্রাফিকে যারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বা নিতে চান, তাদের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চললে ছবিগুলো হবে আরও প্রাণবন্ত।

যেকোনো সফল ছবি তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন। এতে থাকে মৌলিক ৩টি উপাদান— লাইট, সাবজেক্ট এবং কম্পোজিশন। সঠিক সময়ে সঠিক আলোটা ধরতে পারলে একটি ছবির গুরুত্ব অনেকগুণ বেড়ে যায়।

আর সাবজেক্ট বলতে সেই বিষয়বস্তুকে বোঝায়, যা ছবির মূল চরিত্র। সাবজেক্ট হচ্ছে ফটোগ্রাফির প্রোটাগনিস্ট। 

তৃতীয় আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, অর্থাৎ কম্পোজিশন হচ্ছে সবগুলো উপাদানের সর্বোচ্চ ভালো সমন্বয়। এই কম্পোজিশনের ওপর নির্ভর করে কিছু ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। 

প্রথম ক্যামেরার ইতিহাস থেকে আজকের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পর্যন্ত যাত্রায়, সময়ের পরীক্ষায় এসব 'ফটোগ্রাফিক ফর্মুলা' অত্যন্ত কার্যকর বলে জানা গেছে। 

দ্য রুল অব থার্ডস

পোর্ট্রেট, ওয়াইল্ডলাইফ, ল্যান্ডস্কেপ— যেকোনো ধরনের ফটোগ্রাফিতেই এই নিয়ম খাটানো যায়। ছবি তোলার ফ্রেমকে ৩টি অংশে ভাগ করাই হচ্ছে 'দ্য রুল অব থার্ডস'। এ নিয়ম অনুযায়ী, ফ্রেমকে সমান ৩ ভাগে ভাগ করা হবে এবং এই কাল্পনিক ৩x৩ গ্রিডে থাকবে মোট ৯টি ছোট ছোট অংশ।

রুল অব থার্ডস মেনে চললে ছবিতে মোট ৪টি 'পয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট' রাখা হয়। এর মধ্যে সাবজেক্ট একটি বিন্দুতে থাকে। রুল অব থার্ডসে সাবজেক্ট ফ্রেমের কেন্দ্র থেকে দূরে থাকে। চলনশীল সাবজেক্টের চেয়ে স্থির দৃশ্যের জন্য এই নিয়ম বেশি উপযোগী, কেন না এতে ভাগ করে নেওয়া অংশগুলো বিক্ষিপ্ত হবার সুযোগ কম পায়। ফটোগ্রাফারও তার মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন। 

দ্য গোল্ডেন রেশিও রুল

ফটোগ্রাফির এই স্বর্ণালী নিয়মটি অবশ্য শুরুর দিকে আয়ত্ত করা যায় না। অপেক্ষাকৃত পারদর্শী ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি বেশি উপযোগী। অনেকটা হিসেব-নিকেশের ব্যাপার আছে এতে। সহজ কথায় বললে, ছবির সাবজেক্টকে এমনভাবে ফ্রেমের আনুভূমিক রেখায় রাখতে হবে— যাতে তা সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিমধুর হয়। সেই নির্দিষ্ট অনুপাতটি হচ্ছে ১.৬১৮:১, যা কি না আবার গ্রিক হরফ 'ফাই'-এর মান নির্দেশ করে। গোল্ডেন রেশিও হচ্ছে এমন একটি গাণিতিক ফর্মুলা, যাতে বলা হয়, যেকোনো রেখাকেই এমনভাবে ভাগ করা সম্ভব যাতে করে ক্ষুদ্রতর অংশটি দ্বারা ভাগ করা দীর্ঘতর অংশের অনুপাত সবসময় একই থাকবে। এই রেখা ছবি তোলার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় বক্ররেখা, তাই পরিপার্শ্বে থাকা যেকোনো সর্পিল বা চক্রাকার উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গোল্ডেন রেশিও রুল অনুযায়ী ছবি তোলা যায়। 

দ্য রুল অব ভ্যানিশিং পয়েন্ট 

ছবিতে গভীরতা আনতে এই নিয়মটি অত্যন্ত কার্যকর। ভ্যানিশিং পয়েন্ট বলতে এমন একটি বিন্দুকে বোঝায়, যেখানে সবগুলো সমান্তরাল রেখা দিগন্তের পানে মিলেমিশে এক হয়ে যায়। নির্দিষ্ট পরিসরের ছবিতেও এই ফর্মুলা খাটানোর মাধ্যমে এক ধরনের অসীম অনুভূতি আনা সম্ভব। কোনো রেললাইন কিংবা সেতুর একপ্রান্তে দাঁড়ানো মানুষ, এমনকি ছাদে টাঙানো দুটো দড়ির প্রান্তে বসে থাকা একটি পাখির ছবিও হতে পারে দ্য রুল অব ভ্যানিশিং পয়েন্টের দারুণ উদাহরণ। 

তবে এভাবে মানুষ বা পাখির আলাদা কোনো সাবজেক্ট রাখতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই— শুধু সমান্তরাল আলোকচিত্রও হতে পারে দারুণ কিছু। 

৬০-৩০-১০ এর রংমিলান্তি

একটি রঙিন ছবির ক্ষেত্রে কী কী রং ফ্রেমে থাকছে, সেটা খুবই জরুরি। রঙকেই যদি মূল ধরে কোনো ছবি তোলা হয়, তবে সেখানে ৬০-৩০-১০ নিয়ম প্রয়োগ করা যায়। তবে ফটোগ্রাফারের খুব বেশি ভালো ভাগ্য না হলে এই ছবিগুলোর দৃশ্য একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হয়। এ নিয়ম অনুযায়ী, ফ্রেমে শতকরা ৬০ ভাগ থাকবে মূল রং, ৩০ ভাগ গৌণ রং এবং বাকি ১০ ভাগ আনুষঙ্গিক। এ ধরনের ফটোগ্রাফি অনেকটা নাটকের মঞ্চ প্রস্তুত করার মতো, যাতে খুব হিসেব করে বিভিন্ন চরিত্রকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়। খাবারদাবার, পোশাক, ফ্যাশন সংক্রান্ত ছবির ক্ষেত্রে এই নিয়ম বেশি উপযোগী। 

প্রতিসাম্য কিংবা ছাঁচ

একটি দেয়ালে পুনরাবৃত নকশার দল, বাগানে দলে দলে ফুটে থাকা ফুলের পাঁপড়ি, পুরোনো সব বাড়িতে হাটখোলা চৌকো জানালা সব— আমাদের আশেপাশে অত্যন্ত এলোমেলো জগৎটায় গোছানো এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে ধরা দেয়। এই প্রতিসাম্য বা ছাঁচগুলো ক্যামেরায় এমনভাবে তুলে আনা যায়, যাতে আশেপাশের অন্যসব অগোছালো ভাব ধরা না দেয়। ক্যামেরার ছাঁচে গড়া এই ছাঁচীকৃত ছবির নিয়ম ছবিকে করে তোলে দৃষ্টিমধুর, আরামদায়ক। শুধু স্থিরচিত্র নয়, ভিডিওগ্রাফিতেও এই নিয়ম মানা হয়। পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসনের সিনেমাগুলো দেখলে এই নিয়মটির যথাযথ প্রয়োগ আরও ভালো করে বোঝা যাবে। 

তবে নিয়মের খাতা যতই বিস্তৃত হোক না কেন, ছবি তোলা বা অন্য যেকোনো কাজেই নিজস্ব কিছু সৃজনশীলতার স্পর্শ থাকা দরকার। বাঁধা নিয়মের সঙ্গে স্বতস্ফূর্ততার মিশেল ঘটালেই জন্ম নেবে দৃষ্টিনন্দন কিছু আলোকচিত্র। 

তথ্যসূত্র: এমউইও, ফটোগ্রাফিলাইফ, এনএফআইএডু
 

Comments

The Daily Star  | English

ACC to get power to probe corruption by Bangladeshis anywhere, foreigners in Bangladesh

The Anti-Corruption Commission (ACC) is set to receive sweeping new powers under a proposed ordinance that will allow it to investigate corruption by Bangladeshi citizens, both at home and abroad, as well as by foreign nationals residing in the country. .The draft Anti-Corruption Commissio

35m ago