‘ব্লাড মুন’ থেকে ‘ব্লু মুন’—কেন চাঁদের নাম বদলায়?

আজ রাতে মহাজাগতিক এক বিরল দৃশ্য দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। শুধু তাই নয়, আজ রাতে চাঁদে দেখা যাবে রক্তাভ যা 'ব্লাড মুন' নামে পরিচিত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকায় আজ রাত ৯টা ২৭ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। রাত ১০টা ২৭ মিনিটে আংশিক গ্রহণ শুরু হওয়ার পর চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যেতে থাকবে। পূর্ণগ্রাস শুরু হবে রাত ১১টা ৩০ মিনিটে, যা চলবে রাত ১২টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। এ সময় চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ার আওতায় চলে আসবে এবং একটি লালচে বা তাম্রবর্ণ ধারণ করবে। মধ্যরাত ১২টা ১১ মিনিটে গ্রহণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। সবশেষে সোমবার ভোররাত ২টা ৫৫ মিনিটে গ্রহণ শেষ হবে।

কেন এই নাম?

যখন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হয়, তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সূর্যের আলোর নীল অংশটি বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। কিন্তু লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে চন্দ্রপৃষ্ঠে গিয়ে পড়ে। এর ফলে চাঁদকে দেখতে লালচে বা তামাটে মনে হয়। এই রক্তিম বর্ণের কারণেই একে 'ব্লাড মুন' বলা হয়।

ব্লু মুন: আসলে নীল নয়

'ওয়ান্স ইন এ ব্লু মুন' কথাটা অনেকেই শুনেছেন। অতি বিরল ঘটনা বোঝাতে এই কথাটি ব্যবহার করা হয়। সেদিক থেকে ব্লু মুন আসলেই খুব বিরল ঘটনা। সাধারণত বছরে ১২টি পূর্ণিমা হয়, কিন্তু কোনো কোনো বছরে ১৩টি পূর্ণিমা হয়। তখনই এক মাসে দুটি পূর্ণিমা পড়ে, দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ব্লু মুন। এটি দুই-তিন বছর পরপর ঘটে।

সুপারমুন কতটা বড়?

চাঁদ যখন তার কক্ষপথে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে এবং সেই সময় পূর্ণিমা হয়, তখন তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। এই ঘটনাকে 'সুপারমুন' বলা হয়। তবে আজকের চন্দ্রগ্রহণ সুপারমুন নয়। সুপারমুনে চাঁদ প্রায় ১৪ শতাংশ বড় আর ৩০ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল হয়।

বিরল মহাজাগতিক ঘটনা সুপার ব্লাড ব্লু মুন

যখন একসঙ্গে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ (ব্লাড মুন), সুপারমুন আর ব্লু মুন ঘটে, তখন সেটিকে বলা হয় সুপার ব্লাড ব্লু মুন। এই দুর্লভ ঘটনা বহু বছর পরপর দেখা যায়। সর্বশেষ এটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে।

এ ছাড়াও বছরের বিভিন্ন মাসের পূর্ণিমার আলাদা আলাদা নাম রয়েছে, যা আবহাওয়া, প্রাণীদের আচরণ ও কৃষির ওপর ভিত্তি করে রাখা হয়েছে। যেমন সেপ্টেম্বরের পূর্ণিমাকে 'হারভেস্ট মুন' বলা হয়, কারণ এটি ফসল তোলার মৌসুমের কাছাকাছি সময়ে হয়। একইভাবে জানুয়ারির পূর্ণিমা উলফ মুন, ফেব্রুয়ারির স্নো মুন, মার্চের ওয়ার্ম মুন—এভাবে চলতে থাকে। নেটিভ আমেরিকান সংস্কৃতি ও ইউরোপীয় ঐতিহ্য থেকে এসব নাম এসেছে।

ব্লাড মুন অবলোকনের জন্য রাতে ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে বিশেষ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। রাত ৯টা ২৮ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ভোর ২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত এই আয়োজন চলবে। এখানে যে কেউ গিয়ে টেলিস্কোপ দিয়ে চন্দ্রগ্রহণ দেখার সুযোগ পাবেন।

Comments