‘আমি যেটা বুঝি ওদের সময়টা শেষের দিকে’ 

কার্টুন- বিপ্লব/স্টার

এরপরে কি হবে? সাকিব আল হাসান কি শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন? নাকি ওয়ানডে সিরিজটা ছুটি কাটিয়ে টেস্ট খেলবেন? নাকি পুরো সিরিজেই থাকবেন অনুপস্থিত? এখনো পর্যন্ত কোন কিছুই স্পষ্ট নয়, আপাত দৃষ্টিতে বিসিবি তাকিয়ে আছে সাকিব আাবার কি বলেন। তবে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, তারা কোন তারকা খেলোয়াড়ের কাছে এখন আর জিম্মি নন। বরং অভিজ্ঞদের ছাড়াই সামনে এগিয়ে যাওয়ার বাস্তবতাও দেখছেন তিনি।

মনে হচ্ছে সাকিব তার নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে ক্যারিয়ারের সমাপ্তির দিকে এগুচ্ছেন। কিন্তু এই তারকা অলরাউন্ডারকে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে  বারবার তৈরি হওয়া দোলাচলে কি করা উচিত, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

গত রোববার রাতে দুবাই যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাকে দুই সংস্করণের দলে রাখা হলেও তিনি নিজে সেখানে যেতে ইচ্ছুক নন। সাকিব জানান, ক্রিকেটটা আপাতত তিনি উপভোগ করছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতও নন।

আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ চলাকালীন প্রোটিয়া সফরে যাওয়ার কথা বলেছিলেন সাকিব। সে অনুযায়ী তাকে দলে রাখা হয়। শেষ মুহূর্তে তার এই অবস্থান বিপাকে ফেলে দেয় বিসিবিকে।

সাকিবের এমন অবস্থানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বোর্ড প্রধান। তার মতে ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে আসায় সিনিয়র ক্রিকেটাররা ভুগছেন মানসিক অস্থিরতায়,   'আমি যেটা  বুঝি ওদের সময়টা শেষ দিকে তো। আসলে এরা  অনেক কিছু করেছে, এত বছর অবদান রেখেছে। এখন ওরা মানসিকভাবে থিতু না। নিজেরাও বুঝতে পারছে না কি করা উচিত। এটার জন্য ওদের সঙ্গে সামনাসামনি বসতে পারলে খুব ভাল হতো।'

'শুনেন আমি চিন্তিত না। আমরা চাই ওরা খেলুক। সবাই খেলুক, ভালো খেলোয়াড়রা খেলুক। কেউ যদি খেলতে না চায় আমি একেবারেই চিন্তিত না।'

সম্প্রতি জাতীয় দলের সাফল্যে অবদান অপেক্ষাকৃত তরুণ ক্রিকেটারদেরই। অনভিজ্ঞদের নিয়েই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার ঐতিহাসিক টেস্ট জিতে এসেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চার সিনিয়র তারকাদের ছাপিয়ে যান দলের জুনিয়র ক্রিকেটাররা। বোর্ড প্রধানের ইঙ্গিতও সেদিকে, 'নিউজিল্যান্ড না শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে যে আমরা জিতলাম, এটা কার জন্য জিতেছি ?একটা জেতালো আফিফ (হোসেন) আর (মেহেদী হাসান) মিরাজ। একশোটার মধ্যে ওরকম ম্যাচ দুটো জেতা যাবে। আরেকটা জিতল সেখানে বড় অবদান হচ্ছে লিটনের। পুরো সিরিজে লিটন (দাস)। টি-টোয়েন্টিতে একটা জিতলাম তাও লিটন। একটাতে সে রান করতে পারেনি হেরে গেছি।'

সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও ইঙ্গিত বিসিবি সভাপতির, 'বিপিএলে ভালো করছেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে তাদের (সিনিয়রদের) পারফরম্যান্স কি সাম্প্রতিক সময়ে?  (সিনিয়রদের) একজনও বলতে পারবে না তার পারফরম্যান্স ভাল।'

গত বছর থেকে নতুন চুক্তিপত্রে কে কোন সংস্করণ খেলতে চায় তা বাছাই করার সুযোগ দেয় বিসিবি। তাতে তিন সংস্করণেই খেলার কথা বলেন সাকিব, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা। কিন্তু নাজমুল জানান এই কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল হচ্ছে না। তিনি এবার আরও কঠোর হওয়ার কথা বলছেন, 'আমি বারবার বলি কেউ যদি খেলতে না চায় আগেভাগে জানিয়ে দিল। কোন সমস্যা নেই। তাদেরকে লিখিত পরিকল্পনা জানাতে হবে।'

'এই ধরণের জিনিসে আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে তো আর সম্ভব হয় না।'

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে মোটে ৬০ রান করতে পেরেছিলেন সাকিব। উইকেট নেন ৫টি।  টি-টোয়েন্টি  সিরিজে করেন কেবল ১৪ রান। প্রথম ম্যাচে উইকেট পেলেও পরের ম্যাচে ছিলেন ভীষণ খরুচে। দুবাই যাওয়ার আগে নিজের এমন অবস্থার জন্য ক্রিকেট উপভোগ না করার কারণ দেখান সাকিব। তিনি জানান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি খেলা উপভোগ করেননি।

এখানেই আপত্তি বিসিবি সভাপতির। উপভোগ না করলে সাকিব খেলেছেন কেন, প্রশ্ন তার, 'কেউ যদি খেলাটা উপভোগ না করে তাহলে সে খেলল কেন, তার খেলার কোন পয়েন্ট থাকতে পারে না। সে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। বোর্ডকে বলতে পারত। কিন্তু সে বিমানবন্দরে গিয়ে এসব বলল।'

আইপিএলের নিলামের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সিরিজের সময়টায় নিজেকে ফাঁকা রেখেছিলেন সাকিব। তাতে সায় ছিল বোর্ডেরও। কিন্তু নিলামে তাকে কেউ দলে না নেওয়ায় বদলে যায় পরিস্থিতি। বোর্ড আশা করেছিল তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় পুরো সিরিজই খেলবেন। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা এগিয়ে গেলেও শেষ সময়ে এসে তৈরি হয়েছে নাটকীয়তা। যা দেশের ক্রিকেটের জন্য নেতিবাচক। নাজমুলের মতে, 'পরিস্থিতি মোটেও স্বাভাবিক না।'

সাকিবের সর্বশেষ নাটকীয় অবস্থানের পর বোর্ড প্রধান দলের স্বার্থকে সামনে নিয়ে এসেছেন বলে মনে হচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তির চেয়ে দেশ আগে, দল বড়- এসব কথার আসলেই কি কোন মানে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের চলমান এই বিশৃঙ্খলায়?

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

5h ago