মতামত

শিক্ষার্থীদের পূর্ণকালীন ইন্টার্নশিপ অর্থহীন

স্টার গ্রাফিক্স

বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হওয়াটা মোটেও রসিকতার বিষয় নয়। একজন শিক্ষার্থীকে নানা ধরনের জটিল সব কোর্সের তীব্র মনস্তাত্ত্বিক চাপের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা, গ্রুপের অসহযোগী সদস্য এবং অস্বাভাবিক সামাজিক জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। এর সঙ্গে টিউশনি ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ঝামেলা তো আছেই।

ছাত্রত্ব শেষ করে করপোরেট জীবনে প্রবেশের পূর্ব মুহূর্তটাকে অনেকের কাছেই সুদিন বলে মনে হতে পারে। কারণ, সকাল ৮টায় শান্তির ঘুম ভেঙে ক্লাস ধরার মতো সংগ্রাম থেকে মুক্তি মিলতে যাচ্ছে। তবে, তার আগে একটা বাঁধা পেরোতে হয়: যার নাম 'পূর্ণকালীন ইন্টার্নশিপ'। শেষ বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করাটাই ইন্টার্নশিপের লক্ষ্য থাকার কথা। অনেক কোম্পানি তাদের উপযোগী কোর্স গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কাছে ইন্টার্নশিপের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ইন্টার্নশিপগুলো তরুণদের উপকারের পরিবর্তে অ্যাকাডেমিক জীবনে বোঝা বাড়িয়ে তোলে।

পৃথিবীর অনেক দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ করাটা খুব সাধারণ একটা ঘটনা। যেটা তাদের ডিগ্রি নেওয়ার সময় অভিজ্ঞতা ও অর্থ লাভের সুযোগ করে দেয়। অথচ, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের ডিগ্রি প্রোগ্রামের একেবারে শেষে এসে একটি ইন্টার্নশিপ করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটাই তাদের শিক্ষাজীবনের একমাত্র ইন্টার্নশিপ হয়ে থাকে।

এর বড় একটি কারণ হলো ত্রৈমাসিক সেমিস্টার পদ্ধতি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। যেখানে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ থাকে না।

পূর্ণকালীন ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে চাকরির মতো সমান প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন হয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই সপ্তাহে ৫ দিন কর্মস্থলে থাকতে হয়। আবার এসব ইন্টার্নশিপের মেয়াদ হয়ে থাকে ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত। যা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ সেমিস্টারের সমান। তাই অ্যাকাডেমিক ডিগ্রির পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ চালিয়ে যাওয়াটা তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এই অবস্থায় অ্যাকাডেমিক ডিগ্রির সঙ্গে সমন্বয় করে যদি ইন্টার্নশিপ নিতে হয়, তাহলে একটা পূর্ণাঙ্গ সেমিস্টার ছেড়ে দিতে হবে, অথবা এই অভিজ্ঞতার বিষয়টি বাদ দিয়ে অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি চালিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ, দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, এখানে কোনো উইন-উইন পরিস্থিতির সুযোগ নেই, যেকোনো একটা সুযোগ হাতছাড়া করতেই হবে।

বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপের একটা দুঃখজনক সত্য হচ্ছে বেতন। যেসব শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত ইন্টার্নশিপ পায়, তাও হয়ে থাকে অবৈতনিক। প্রাথমিকভাবে, এটা একটি বড় সমস্যা, কারণ সম্পূর্ণ সেমিস্টারে বিনামূল্যে কাজ করার আর্থিক সচ্ছলতা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই থাকে না। কিছু ব্যতিক্রম আছে, যারা বেতন দেয়, যদিও তার পরিমাণ হয় নামমাত্র। বলতে গেলে, কোম্পানিগুলো সামান্য বেতনের বিনিময়ে ইন্টার্নদের দিয়ে একজন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার সমান কাজ করিয়ে নেয়।

তবে, এরচেয়েও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, অনেক ইন্টার্নশিপেই শিক্ষার্থীরা কিছু শিখতে পারেন না। তরুণ শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিরাট ক্ষমতার একটা ব্যবধান রয়েছে। কিছু ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সহযোগীদের পরিবর্তে এসব তরুণ ইন্টার্নদের কাজে লাগায়। যেখানে তাদের দিয়ে করানো হয় ক্ষুদ্র ও অগুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা তাদের জীবনে কোনো অভিজ্ঞতার সঞ্চার করে না। উলটো এসব শিক্ষার্থীরা অসম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের জন্যে অপ্রেরণাদায়ক।

এখানে পূর্ণকালীন ইন্টার্নশিপের বিরুদ্ধে কোনো কথা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সংস্কৃতি ও অবৈতনিক কিংবা নামমাত্র বেতনের নামে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেওয়ার সংস্কৃতি মেনে নেওয়া যায় না। এসব অনভিজ্ঞ শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের নামে অবৈতনিক ও কেরানিগিরির কাজে যুক্ত করা হচ্ছে, যা মোটেও উচিত নয়।

অনুবাদ করেছেন এস এম সোহাগ

Comments

The Daily Star  | English
Development philosophy of the FY2026 budget

What the development philosophy should be for the FY2026 budget

The philosophical focus of the upcoming budget should be pro-poor and pro-people.

13h ago