জাপান থেকে ভালোবাসা নিয়ে

শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া মেয়েদের মাঝে জাপানের নাগরিক হিরোকো কোবায়াশি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের অফিসে সম্প্রতি এই ছবিটি তোলা হয়। ছবি: স্টার

আর দুবছর হলেই ৯০ বছরে পা দিবেন জাপানী নারী হিরোকো কোবায়াসির। এই বয়সেও জাপানে নিজের বাড়িতে ‘ইকিবানা’ নামে পরিচিত ফুল সাজানোর কৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ দেন তিনি। গত ৪০ বছর ধরে এই কাজ করছেন। ফটোগ্রাফির ওপরও রয়েছে পেশাদারি অভিজ্ঞতা। এ থেকেই বলা যায় নিশ্চিত সৌন্দর্যবোধের অধিকারী তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের ঝিনাইদহ ও পঞ্চগড়ে তাঁর পরিচিতি দানশীলতার জন্য। তার নিজের উদ্যোগে প্রায় একশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ের পড়ালেখার খরচ চলছে।

রাইগ্রামের মেয়ে সোমা রানি দাস। যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন তিনি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার যে ৪৫ জন মেয়ে হিরোকোর শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন সোমা তাদের মধ্যে একজন। বাদবাকি মেয়েরা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার। “এই দয়ালু নারী সহায়তার হাত না বাড়িয়ে দিলে আমাকে হয়ত পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হতো।” এভাবেই হিরোকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন সোমা।

কালীগঞ্জের বলকান্দাপুর গ্রামের আরেক মেয়ে ঝুমুর খাতুন। যশোর মহিলা কলেজে মাস্টার্সে পড়ছেন তিনি। তিনিও তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পুরো কৃতিত্বটা দিলেন হিরোকোকে।

জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে হিরোকো যে শিক্ষার সেতুবন্ধন গড়েছেন তাঁর সম্পর্কে জানতে হলে ফিরতে হবে ২০০৩ সালে। জাপানের বেসরকারি সংস্থা ‘হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড’ এর হয়ে কাজ করতে সে বছর বাংলাদেশে আসেন তিনি। একই বছর কালীগঞ্জের মোস্তবাপুর গ্রামে অর্থাভাবে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পেরে খাদিজা নামের এক মেয়ের আত্মহত্যার কথা জানতে পারেন হিরোকো।

কালীগঞ্জে যারা হিরোকোকে চেনেন তারা জানান, হিরোকো নিজেও গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাভাবের মধ্যে থেকেই তাকে পড়ালেখা করতে হয়েছে। এমনও হয়েছে যে পড়ালেখা শেষ করতে ঋণ নিতে হয়েছে। এ কারণেই খাদিজার মৃত্যু তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। এই ঘটনা থেকেই গরীব মেয়েদের জন্য বাস্তবসম্মত কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন হিরোকো।

শিক্ষাবৃত্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা হাফিজুর রহমান জানান, “তার প্রধান লক্ষ্য হলো মেয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা। ছোট বেলা থেকেই নারীর ক্ষমতায়নের এই অনুরাগী গরীব শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আকাঙ্ক্ষা রাখেন।”

হিরোকোর শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার একটাই শর্ত। আর সেটা হলো, ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করা যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন, আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারলে তারা পরবর্তী প্রজন্মের গরীব শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে উদ্বুদ্ধ হবেন।

হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের পরিচালক আনজুমান আক্তার জানান, প্রতি বছর মার্চ মাসে বাংলাদেশে আসেন হিরোকো। তিনি যতদিন বেঁচে রয়েছেন ততদিন তিনি এই শিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে যাবেন।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
Shibir-backed candidates Shadik, Farhad elected Ducsu VP, GS

Shibir-backed candidates Shadik, Farhad elected Ducsu VP, GS

Abu Shadik Kayem won 14,042 votes while Abidul Islam Khan, from the Jatiyatabadi Chhatra Dal-backed panel, got 5,708 votes.

1h ago