অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স দীনবন্ধু এক হাতে কাজ করে সফল কৃষক

দীনবন্ধু দাস ভক্তিশাস্ত্রী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গত বুধবার বিকেল ৫টার দিকে শিয়ালখোওয়া-নামুড়ি সড়কের পাশে বান্দেরকুড়া এলাকায় দেখা হয় কৃষক দীনবন্ধু দাস ভক্তিশাস্ত্রীর (৬৭) সঙ্গে। এক হাতে কোদাল দিয়ে জৈবসার বালতিতে তুলে জমিতে নিয়ে ফেলছেন। নিরলসভাবে একাগ্র চিত্তে কাজটি করছিলেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের পরও তার মুখে হাসি ছিল।

রাস্তা দিয়ে অনেক পথচারী যাচ্ছেন, কিন্তু কারো সঙ্গে কথা বলার অবসর ছিল না তার। এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন কৃষক দীনবন্ধু।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শিয়ালখোওয়া গ্রামের দীনবন্ধু পৈতৃক সূত্রে প্রায় ১৪ বিঘা জমি পেয়েছেন। এ জমি নিজেই চাষ করে সংসার চালান। তাকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী মায়া মুক্তা রানী (৬০)। তাদের একমাত্র সন্তান রামকৃষ্ণ নাথ দাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগের ছাত্র।

'প্রায় ৮ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বাম হাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা কেটে ফেলতে হয়,' উল্লেখ করে দীনবন্ধু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন এক হাতে কাজ করতে অভ্যস্ত। সমস্যা হচ্ছে না। তবে আগের মতো দ্রুত কাজ করতে পারি না।'

'কাজের মধ্যে থাকতে ভালো লাগে। এ কারণে সুস্থ আছি,' যোগ করেন তিনি।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

দীনবন্ধুর স্ত্রী মায়া মুক্তা রানী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবসময় স্বামীকে সহযোগিতা করি। মাঝে-মধ্যে শ্রমিক নিতে হয়। জমিতে খাদ্য শস্য ও সবজি উৎপাদন করি। নিজেদের লিচু বাগান আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার স্বামী এক হাতে কাজ করেও গ্রামে একজন সফল কৃষক। জমিতে আশানুরূপ ফসল উৎপাদন করেন।'

শিয়ালখোওয়া গ্রামের মণীন্দ্রধর বর্মার ছেলে দীনবন্ধু দাস ভক্তিশাস্ত্রী। গ্রামে দীনবন্ধু সাধু নামে পরিচিত। ৪ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৭৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স পাস করেন। পরে কলকাতায় 'গৌড়ীয় মিশন বিদ্যাপীঠ'-এ ১৬ বছর ধর্মীয় শাস্ত্র সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশ নেন।

দীনবন্ধু বলেন, 'জীবনে চাকরির অনেক সুযোগ এসেছিল। কিন্তু করিনি। কৃষিকাজকে প্রাধান্য দিয়েছি। ফসল উৎপাদন করতে খুব ভালো লাগে। গ্রামের কৃষকরা আমার কাছে আসে। কৃষিবিষয়ক পরামর্শ নেন।'

'কৃষিকাজের চেয়ে মহৎ কাজ নেই। কৃষক আমার জীবনের আদর্শ,' বলে মন্তব্য করেনি তিনি।

স্থানীয় কৃষক যতীন চন্দ্র বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীনবন্ধু এক হাতে কৃষিকাজ করে সফল। তিনি সব কৃষকের চেয়ে বেশি পরিশ্রমী। দীনবন্ধু নিরলসভাবে কাজ করেন। আমরা তার কাছে কৃষি বিষয়ে পরামর্শ নিই।'

একই গ্রামের কৃষক সুরত আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীনবন্ধু উচ্চ শিক্ষিত হয়েও কৃষিকাজকে আপন করে নিয়েছেন। তিনি গ্রামের কৃষকদের অনুপ্রেরণা। তিনি আমাদের গ্রামের একজন আদর্শ ও সফল কৃষক।'

Comments

The Daily Star  | English
Barishal University protest

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

11h ago