বন্যায় ফসল হারিয়ে কৃষক এখন শ্রমিক

সুনামগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি পয়েন্টে শ্রমিকের কাজ পেতে প্রতিদিন সকালে জড়ো হন নিম্ন আয়ের অনেক নারী-পুরুষ। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার রায়নগর গ্রামের কাছে ৭ একর জমিতে প্রতিবছর এই সময়টাতে কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকতেন সায়েদ মিয়া। তবে এ বছর বন্যার কারণে জমির ফসল পানিতে চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ৫০ বছর বয়সী এই কৃষক এখন বেশিরভাগ সময় কাটান সুনামগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি পয়েন্টে। সেখানে দাঁড়িয়ে বা বসে থেকে শ্রমিক হিসেবে কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় করেন। কোনো দিন কাজ পান, কোনো দিন পান না।

মাঝখানে কয়েকদিন অনেক বৃষ্টি থাকায় কাজ পাননি। তবে গত দুয়েকদিন ধরে রোদ ওঠায় শ্রমিকের কাজে ডাক পাচ্ছেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টারকে সায়েদ মিয়া বলেন, 'বাড়িতে খাবার নেই। আমাদের জমির বোরো ধান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সেইসঙ্গে মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের কথা মনে পড়লে রাতে ঘুমাতে পারি না।'

তাই কিছু খাবার জোগাতে অল্প টাকায় হলেও শ্রমিকের কাজ করতে চান তিনি। তিনি বলেন, 'এক সপ্তাহের বেশি এখানে আসছি। কিন্তু মাত্র ২ দিন কাজ পেয়েছি।'

নিয়মিত শ্রমিকের চেয়ে তাকে কম মজুরি দেওয়া হলেও, তার কিছুই করার নেই। বোরো চাষের জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা পরিশোধের টাকা জোগাড় করতে হবে।

সায়েদ জানান, আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি লোক কাজ খুঁজছে।

তিনি ছাড়াও কালীবাড়ি পয়েন্টে প্রতিদিন কাজের জন্য ভিড় জমান হাওর এলাকার অসংখ্য মানুষ।

চলতি সপ্তাহে কালীবাড়ি পয়েন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারীসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোক কাজের সন্ধানে দাঁড়িয়ে আছেন। সকাল ৭টার দিকে তারা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন এবং রাত ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

জেলা সদরের সুলতানপুর গ্রামের ফয়সল আহমেদ ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি আগে কখনো শ্রমিক হিসেবে কাজ করেননি। কিন্তু ফসল পানিতে ভেসে যাওয়ায় এবং বাড়িতে টাকা-পয়সা না থাকায়, তাকে সেখানে কাজের খোঁজে যেতে হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমার পরিবারকে বাঁচানোর জন্য আমাকে কাজ করতে হবে।'

৩ বছর ধরে ওই পয়েন্টে কাজের জন্য যান শ্রমিক সাজ্জাদ মিয়া। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন,' বৈশাখের আগে কালীবাড়ি পয়েন্টে ২০-২৫ জনকে দেখা যেত কাজের খোঁজে এসেছেন। এখন বন্যার পর হাওর এলাকার অনেক কৃষক সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন।'

'এখন প্রতিদিন প্রায় ১৫০ লোক সেখানে আসেন কাজের খোঁজে,' বলেন তিনি।

দোয়ারাবাজার উপজেলা থেকে আসা কৃষক উস্তার মিয়া বলেন, 'ঋণ শোধ করার জন্য আমার কাজ করা দরকার। এলাকায় একজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি আমাকে চাপ দিচ্ছেন।'

'এক বছর আগেও এই ঋণের টাকা আমার কাছে বড় অংক ছিল না। কিন্তু এ বছর ফসল ভেসে যাওয়ায় শোধ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে,' বলেন তিনি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর এলাকার সাদ্দাম মিয়া (৩৫) বলেন, 'আমার এক আত্মীয়ের সবকিছু বন্যায় নিয়ে গেছে। সেজন্য তিনি চাকরি খুঁজছেন। আমিও দুয়েকদিনের ভেতর চাকরি খুঁজতে বের হবো। উপায় না পেয়ে যেতে হচ্ছে।'

তিনি জানান, হাওর এলাকার অনেকেই কাজের সন্ধানে সুনামগঞ্জ ছেড়ে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটসহ অন্যান্য জেলায় চলে যাচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Which countries are affected by Trump's travel bans to the US?

US President Donald Trump signed a proclamation on Tuesday further restricting the entry of foreign nationals to the United States.

1h ago