ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে জ্বালানি রপ্তানি থেকে ৯৮ বিলিয়ন ডলার আয় রাশিয়ার

রাশিয়ার ওমস্ক অঞ্চলে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল পরিশোধানাগার
রাশিয়ার ওমস্ক অঞ্চলে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল পরিশোধানাগার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নতুন এক সমীক্ষা প্রতিবেদন মতে, সাম্প্রতিক সময়ে, রুশ জ্বালানি রপ্তানির বেশিরভাগ অংশই গেছে ইউরোপে। কিয়েভ পশ্চিমের কাছে মস্কোর সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের দাবি জানিয়ে আসলেও এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন।

আজ সোমবার ফিনল্যান্ড ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) সমীক্ষার বরাত দিয়ে কাতার ভিত্তিক গণ মাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ১০০তম দিন পর্যন্ত রাশিয়া জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি রপ্তানি থেকে ৯৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

আজ যুদ্ধের ১০৯তম দিন চলছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ হামলা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। এছাড়াও, মস্কোর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে।

তা সত্ত্বেও মস্কোর সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য কিয়েভ পশ্চিমের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এসেছে। যুদ্ধের আগে রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ২৭ শতাংশ তেলের জোগান দিতো। 

এ মাসের শুরুর দিকে ইউরোপের দেশগুলোর এই জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এ বছরের মধ্যেই রাশিয়া আমদানি করা গ্যাসের দুই তৃতীয়াংশ কমাবে। তেল আমদানিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আপাতত বিবেচনাধীন নয়।

সিআরইএর প্রতিবেদন মতে, যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে রাশিয়ার জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানি রপ্তানির ৬০ শতাংশের ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যার মূল্যমান প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার।

সার্বিকভাবে, আমদানিকারকদের মধ্যে শীর্ষ স্থানগুলোতে আছে চীন (১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন), জার্মানি (১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন), ইতালি (৮ দশমিক ২ বিলিয়ন), নেদারল্যান্ডস (৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন), তুরস্ক (৭ বিলিয়ন), পোল্যান্ড (৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন) এবং ভারত (৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন)।

রাশিয়ার জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানি থেকে পাওয়া রাজস্ব আসে মূলত ক্রুড (অপরিশোধিত) তেল বিক্রি করে। এই খাত থেকে ৪৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এরপরেই আছে পাইপলাইনের মাধ্যমে পাঠানো গ্যাস (২৫ দশমিক ১ বিলিয়ন), তেলজাত পণ্য (১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন), এলএনজি (৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন) এবং কয়লা (৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন)।

রাশিয়ার বহুল আলোচিত নর্ডস্ট্রিম-১ গ্যাস পাইপলাইন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী রুশ পণ্য বর্জনের কারণে মে মাসে রপ্তানি কমে গেলেও, জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওতে ক্রেমলিনের আয় কমেনি। বরং রপ্তানি থেকে আসা রাজস্ব নতুন নতুন রেকর্ড গড়েছে।

সিআরইএ'র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় রাশিয়ার রপ্তানি মূল্য এ বছর ৬০ শতাংশ বেশি ছিল।

সমীক্ষা মতে, চীন, ভারত ও আরব আমিরাতের মত কিছু দেশ রাশিয়া থেকে আমদানি বাড়িয়েছে।

সিআরইএ জানায়, 'ভারত রুশ ক্রুড ওয়েলের উল্লেখযোগ্য আমদানিকারকে পরিণত হয়েছে। ক্রুড ওয়েল রপ্তানির ১৮ শতাংশই যাচ্ছে ভারতে।'

এই ক্রুড ওয়েল পরিশোধনের পর এর বেশিরভাগ অংশই আবারও পরিশোধিত তেল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

সিআরইএ'র বিশ্লেষক লরি মিলিভির্তা বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু ফ্রান্স দেশটি থেকে এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে।'

মিলিভির্তা মত প্রকাশ করেন, যেহেতু ফ্রান্স দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির বদলে 'স্পট পারচেজ' করছে, সেহেতু বলা যায় আগ্রাসনের শুরু থেকেই ফ্রান্স জেনেশুনে রুশ জ্বালানি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি রুশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান, যাতে 'কথা ও কাজের মিল থাকে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh to boost LNG imports on lower global prices

Falling spot prices and weak demand in Asia prompt Dhaka to look beyond its initial import plan for this year

11h ago