সামার, ফল, উইন্টার অ্যান্ড...স্প্রিং

সামার, ফল, উইন্টার অ্যান্ড...স্প্রিং
যেন মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে। ছবি: নাদিয়া রহমান

গ্রীষ্ম এখানে বিদায়ের পথে। শীতের আগমনে পাতাহীন হয়ে পড়বে বৃক্ষশাখা। তার আগে, শরৎজুড়ে প্রতিটি গাছ যেন সেজে ওঠে রঙিন সাজে।  হালকা গোলাপি, কমলা, হলদে-সোনালি আর টকটকে লাল রঙের পাতা। এই সময়টাকে তাই আলাদা করেই বলা হয় 'ফল কালার' বা শরতের রঙে রঙিন।

গ্রীষ্মের বিদায় আর শরতের আগমনকে কেন্দ্র করে এ সময় শীতপ্রধান বৃক্ষ, গুল্মগুলোকে দেখা যায় ফলে ফলে ভরে উঠতে। এরমধ্যে অন্যতম হলো এখানকার বেরি। মূলত জুন মাসের শেষ থেকেই গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। 

এই সময়টা হলো বিভিন্ন ফার্ম বা বাগানগুলো থেকে ঝুড়ি ভরে ফল তোলার মৌসুম। বাজার থেকে তো কিনে খাওয়াই হয় কিন্তু একবারে মাইলের পর মাইলজুড়ে বাগান, সেই বুনো ঘাস, গাছের ঘ্রাণ (অরচার্ড) আর ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা শব্দের মধ্যে নিজ হাতে ফল পেড়ে খাওয়ার অবশ্যই ভিন্ন এক আনন্দ আছে। বিশেষ করে আমরা যারা ইট-কাঠের বিশাল দালান ঘেরা শহরে বেড়ে উঠেছি, তাদের জন্য কিছুটা সময় হলেও স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া যে, প্রকৃতির প্রতি একটু যত্নশীল হলে সে কতটা উজাড় করে দিতে জানে!

আসন্ন শরতের আগেই একদিন শহরের বাইরে বেড়িয়ে পড়ি। গিয়েছিলাম প্রফেসরের সঙ্গে। লেক্সিংটন শহর ছাড়িয়ে কেন্টাকির আরেকটি শহর প্যারিসের একেবারে উপকণ্ঠে। যান্ত্রিক শহর ছেড়ে যে অনেক দূর এসে পড়েছি, তা বোঝাই যাচ্ছিল মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ভুট্টাক্ষেত দেখে। যেন এর কোনো শেষ বা শুরু নেই। একপাশে সীমাহীন ভুট্টাক্ষেত, আরেকপাশে সীমাহীন ঘোড়ার ফার্ম। আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে সেই রিড ভ্যালি অরচার্ড। টিলা জাতীয় উঁচু জায়গায় এই বাগান বলেই এমন নামকরণ। 

বাগানে যাবার আগে যে জিনিসগুলো হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো তা হলো ফল রাখার রঙিন কিছু ঝুড়ি আর একটা ম্যাপ। এই ম্যাপ ছাড়া বাগানের নির্দিষ্ট দিক, নির্দিষ্ট ফলের গাছ খুঁজে পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এখানে আপেল গাছই আছে কম করে হলেও পঞ্চাশ রকমের এবং সংখ্যায় ৩ হাজারেরও বেশি। এশিয়া, ইউরোপ থেকে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন আপেল গাছের কলম করা আছে। গোল্ডেন হারভেস্ট, সুইট সিক্সটিন, ম্যাকিনটস, হানি ক্রিস্প, পিঙ্ক লেডি, রোম কিংবা গোল্ড রাশ, এত সব নামের আপেলের মধ্য থেকে বাছাই করাটাই দুষ্কর ঠেকছিল। আর এত বড় অরচার্ড ঘুরে দেখবার জন্য আসতে হবে কয়েকবার। এ ছাড়া পিয়ার্স আর আপেলের হাইব্রিডে নতুন এক ধরনের ফল গোল্ডেন এশিয়ান পিয়ার্স চাষ করা হচ্ছে। আর বিভিন্ন রকমের বেরি, পিচ, কুমড়ো (পাম্পকিন) দিয়ে বোঝাই ছিল পুরো বাগান। বেশিরভাগ গাছই নুয়ে আছে ফলের ভারে। কত আপেল, পিচ যে পড়ে আছে মাটিতে। শুনে স্বস্তি লাগল যে; এসব পড়ে থাকা ফল নষ্ট করা হয় না। এগুলো সবই চলে যায় বিভিন্ন পশুর ফার্মে, পশুর খাবার হিসেবে। 

নিজ হাতে ফল পেড়ে কিনে নেওয়া ছাড়াও, যত ইচ্ছা এই বাগানে দাঁড়িয়ে ফল খাওয়া যায়। কোন বাঁধা-ধরা নেই, কেউ দেখতেও আসবে না! ক্রেতা আর বাগানের মালিকেরা হয়তো চিন্তাও করতে পারে না, কেউ লুকিয়ে ফল নিয়ে যাবে বা কেউ দুটো ফল বেশি খেলেও এদের হিসেবে কোনো গড়মিল হয় না। একে তো প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদন। তার থেকেও বড় এদের নৈতিকতা এবং উদার মানসিকতা! এমনো কতদিন হয়েছে বাক্সভরা টমেটো, হরেক রকমের টিউলিপ, গোলাপ কিংবা রুটি ডর্মের সামনে রেখে গিয়েছে দোকানের মালিক। এত টমেটো যাতে নষ্ট না হয় এবং আমরা শিক্ষার্থীরা যাতে বিনা খরচে নিতে পারি তাই এই ব্যবস্থা। 

বাচ্চাদের দেখেছি সারি সারি আপেল, বেরি গাছের ভিড়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে নিজের পছন্দসই ফল বাছাই করতে। শৈশব থেকেই কত স্বাধীনতা আর নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে শেখে এরা! 

পড়ন্ত বিকেলে ফেরার পথে আরও একবার থামতে হলো হর্স ফার্মের পাশে। প্রফেসর গাড়ির জানালা নামিয়ে দিলেন, যাতে গোধূলি বেলায় সবুজ ঘাসে এই প্রাণীগুলোকে ভালো মতো দেখা যায়। খোলা প্রান্তরে অসংখ্য ঘোড়াকে ঘাস খেতে দেখে মনে পড়ে মহীনের ঘোড়াগুলোর কথা। 

আমরা যাইনি ম'রে আজো— তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়:
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে,
প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন— এখনও ঘাসের লোভে চরে
পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর 'পরে।

মানুষকে নিয়ে এদের কোনো ভয়, উদ্বিগ্নতা ছিল না। এই বুনো এবং স্বাধীন প্রাণীরাও জানে; নিজ আবাসে কেউ তার ক্ষতি করতে আসবে না। এ জায়গাটুকু নিতান্তই তার। বরঞ্চ আমরাই ছিলাম আগুন্তুক। 

নাদিয়া রহমান: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।   

Comments

The Daily Star  | English

Water lily tug-of-war continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June..Despite several exchanges of letters and multiple meetings between NCP and the chief election commissioner, other

2h ago