ইতালি যাচ্ছে রাজশাহীর পেয়ারা ও বরই

ইতালিতে পাঠানোর জন্য বাগান থেকে চলেছে বরই সংগ্রহের কাজ। ছবি: স্টার

ইতালিতে পাঠানোর জন্য রাজশাহী থেকে পেয়ারা ও বরই সংগ্রহ করতে শুরু করেছে একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।  

উৎপাদনের তুলনায় ছোট পরিসরে এই সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু হলেও কৃষি বিশেষজ্ঞরা এমন উদ্যোগকে স্থানীয় অর্থনীতিতে একটি সম্ভাব্য উন্নতির ইঙ্গিত হিসেবেই বিবেচনা করছেন। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে রাজশাহীর আম ছাড়াও অন্যান্য ফলের জন্য বিদেশি বাজার খোঁজার নতুন প্রক্রিয়ার সূচনা হল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আদাব ইন্টারন্যাশনাল গত সপ্তাহের ২ দিনে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় উৎপাদিত ১ হাজার কেজি পেয়ারা ও ১০০ কেজি বরই কিনেছে।

এই এলাকার ফল উৎপাদক শফিকুল ইসলামের সাদী এন্টারপ্রাইজ ও উদ্যোক্তা শাহীন ইকবালের বাগান থেকে সরাসরি এসব ফল সংগ্রহ করা হয়।

বাঘা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবারই প্রথম রাজশাহীর আম ছাড়া অন্য কোনো ফল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এটা ছিল রপ্তানির উদ্দেশ্যে চলতি মৌসুমের প্রথম ফলের চালান।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর পেয়ারা ও বরই উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

রপ্তানির জন্য বাগান থেকে পাড়া পেয়ারা। ছবি: স্টার

গত বছর ২০৯৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০০ টন পেয়ারা ও ৮৫৬ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৬৮০ টন বরই উৎপাদিত হয়েছিল।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেয়ারা ও বরেইয়ের চালানগুলো ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরে যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করে এগুলো সরাসরি ইতালিতে পাঠানো হবে।

আদাব ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহী থেকে ১০ টন পেয়ারা ও ৫ টন বরই সংগ্রহ করার পরিকল্পনা আছে তাদের।

তিনি বলেন, 'বিদেশ থেকে আসা চাহিদার ওপর নির্ভর করছে কী পরিমাণ ফল আমরা সংগ্রহ করব।'

এদিকে আমের পাশাপাশি পেয়ারা ও বরই রপ্তানি শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ফল উৎপাদকরা। তবে তাদের ভাষ্য, যে পরিমাণ ফল তারা উৎপাদন করে থাকেন তার তুলনায় রপ্তানিকারকদের চাহিদা কম। ফলে বেশিরভাগ উৎপাদিত ফলই তারা বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারে।

এ বিষয়ে সাদী এন্টারপ্রাইজের শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা প্রচুর ফল উৎপাদন করি। এ বিষয়টিও আমদানিকারক দেশগুলোকে জানাতে হবে।'

শফিকুল তার ৫০ বিঘা জমির বাগান থেকে বছরে প্রায় ৬০ টন পেয়ারা সংগ্রহ করেন এবং তার উৎপাদিত বেশিরভাগ পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় যায়।

তিনি স্থানীয় পাইকারি বাজারে ৩৫ টাকা কেজি দরে পেয়ারা বিক্রি করেন, কিন্তু রপ্তানিকারকরা তা ৫৫ টাকা কেজি দরে কেনেন।

ব্যবসায়ী শাহীন ইকবাল জানান, তিনি তার ৬ বিঘা জমিতে এক মৌসুমে প্রায় ৫০০ মণ বরই উৎপাদন হয়। এখন পর্যন্ত মাত্র ১০০ কেজি বরই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পেরেছেন।

রপ্তানিকারক ইসমাইল হোসেনের বক্তব্য, রাজশাহী থেকে ফল সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাজধানী থেকে দূরত্বই প্রধান সমস্যা।

তার ভাষ্য, যোগাযোগ সহজ হওয়ায় তারা রাজশাহীর চেয়ে নরসিংদী ও সাতক্ষীরা থেকে ফল সংগ্রহ করতে বেশি পছন্দ করেন।

তিনি বলেন, 'ফল সংগ্রহের জন্য আমরা এখন রাজশাহীর সঙ্গেও ভালো যোগাযোগ গড়ে তুলেছি।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, 'রাজশাহী থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহে রপ্তানিকারকদের জন্য ভাল পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি কৃষকদের উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

16h ago