ভারতে অ্যামাজন-উবারের মতো প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা

গিগ কর্মী
মুম্বাইয়ে এক মলের পাশে গিগ কর্মী। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ভারতে অ্যামাজন, উবার ও জোমাটোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করা কর্মীদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।

দেশটিতে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে 'গিগ' কর্মীদের জন্য এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।

গতকাল শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

এ পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের সামাজিক নিরাপত্তা আইন অনুসারে গিগ কর্মীদের দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যবিমা ও অবসর ভাতা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গিগ প্রতিষ্ঠান ও রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, 'গিগ কর্মীদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ব্যবস্থা প্রথমে বিরোধী কংগ্রেসশাসিত রাজস্থানে নেওয়া হতে পারে। এর খরচ কর্মীরা যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেখান থেকে সংগ্রহ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির ক্ষমতাসীন বিজেপির ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক দলের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা অশ্বিনী মহাজন সংবাদ সংস্থাটিকে বলেন, 'গিগ কর্মীদের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা প্রয়োজন। কেননা, অনেক নিয়োগকর্তা তাদের ঠকায়।'

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারতে প্রথাগত চাকরির বাইরে এসে গিগ কর্মীরা নিজেদের অবস্থান বেশ শক্ত করেছেন। করোনা মহামারির সময় বিধিনিষেধের কারণে এই অস্থায়ীভিত্তিক চাকরির সুযোগ দেশটির বেকারত্বের হার কমানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখছে।

ভারতে বিকাশমান গিগ অর্থনীতি

গিগ কর্মীদের নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে ভারতের শ্রম মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য না করলেও সম্প্রতি শ্রমমন্ত্রী ভুপেন্দর যাদব পার্লামেন্টে বলেছেন যে, গিগ কর্মীদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থার খরচ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এবং গিগ প্রতিষ্ঠানগুলো মেটাতে পারে।

এই ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক শিল্প বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, গিগ কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব গিগ প্রতিষ্ঠানগুলো একবাক্যে মেনে নিয়েছে। তারা একটি 'স্বচ্ছ' তহবিলে অর্থ দিতেও প্রস্তুত।

অ্যামাজন এক বার্তায় রয়টার্সকে জানায়, এই শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি ভারতে তাদের পণ্য বিতরণের ক্ষেত্রে ১৩ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ করেছে।

ব্যবসা বিকশিত হওয়ায় শুধু গত বছরেই ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

উবার ও জোমাটোর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই দেশটিতে আরও কয়েক হাজার ছোট ছোট অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে। এর সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে সরকারি তথ্য না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয়, ভারতে খাবারসহ অন্যান্য পণ্য বিতরণ ও শেয়ার রাইডিংয়ের মতো কাজে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ নিয়োজিত আছেন।

বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে, ভারতে এই খাতে ৯ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও বার্ষিক ২৫০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের সুযোগ আছে।

'আমাদের স্বীকৃতির প্রয়োজন'

সংশ্লিষ্ট সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই কল্যাণমূলক ব্যবস্থায় বলা হয়েছে যে নিয়োগকর্তারা তাদের বার্ষিক আয়ের ১ বা ২ শতাংশ কর্মীদের নিরাপত্তা তহবিলে জমা দিতে পারে। এই অর্থের ৫ শতাংশ কর্মীদের দেওয়া হতে পারে।

গিগ কর্মীরা প্রতিদিনই সামাজিকমাধ্যমে তাদের গিগ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কম কমিশন দেওয়া ও দীর্ঘ সময় কাজ করানোর অভিযোগ আনছেন। দেশটির সরকার এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

গত এপ্রিলে কমিশন কাটার প্রতিবাদে কর্মীরা আন্দোলন করায় খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জোমাটোর মুদিপণ্য সরবরাহ বিভাগের কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল।

উবারচালক শীতল কাশ্যপ (৪৭) বলেন, 'আমাদের অভিযোগ জানানোর কোনো জায়গা নেই।'

নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকতে হয় বলেও জানান তিনি।

৪৫ হাজার ক্যাবচালকের সংগঠন ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাপ-বেজড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ সালাউদ্দিন জানান, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

'কর্মী হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি প্রয়োজন। শ্রম আইনের আওতায় আমাদের সব সুবিধা দেওয়া উচিত। আমাদের কাজের সময় বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি কাজের পরিবেশও উন্নত করতে হবে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

‘Polls delay risks return of autocracy’

Says Khandaker Mosharraf after meeting with Yunus; reiterates demand for election by Dec

1h ago