তাপদাহে চাঙা এসির বাজার, টেকনিশিয়ান সংকট

তাপদাহ, তাপপ্রবাহ, এসি,

ঢাকার মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস হাসান। দেশে চলমান তাপদাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে সম্প্রতি একটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) কিনেছেন।

তবে নিজের ঘরে সেই এসি বসাতে না পেরে একপ্রকার হতাশ ফেরদৌস হাসান।

স্থানীয় একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকান থেকে এসিটি কেনেন তিনি। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাকে নিশ্চিত করেন দুই দিনের মধ্যে টেকনিশিয়ানরা তার বাসায় গিয়ে এসিটি বসিয়ে দিয়ে আসবেন।

তিনি বলেন, 'কিন্তু চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো টেকনিশিয়ান আসেননি। আমাদের এখনো তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।'

ফেরদৌস হাসান গত বুধবার সেই দোকানে যান এবং বিলম্বের কারণ জানতে চান। তখন দোকান থেকে তাকে বলা হয়েছে, তীব্র গরমে এসির চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাই টেকনিশিয়ানরা সময়মতো কাজ করে দিতে পারছেন না।

ফলে জমে যাওয়া কাজের কারণে তারা সময়মতো এসি বসাতে পারছেন না।

'এই গরমে আমরা কিছুটা স্বস্তি পেতে এসি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু আমি এখন হতাশা,' বলেন ফেরদৌস হাসান।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামও একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'তিন দিন পার হয়ে গেলেও আমি দোকানে ফোন করে কোনো সাড়া পাইনি। অনেক টাকা দিয়ে এসি কেনার পরও আমার পরিবারকে গরম সহ্য করতে হচ্ছে।'

শুধু ফেরদৌস হাসান ও রফিকুল ইসলাম নন, টেকনিশিয়ানরা চাহিদা মেটাতে না পারায় কেনার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসি বসাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।

প্রতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে দেশের আবহাওয়া ক্রমশ উষ্ণ হয়ে ওঠে। ফলে এ সময় সাধারণত এসি বিক্রি শীর্ষে থাকে। তবে তাপদাহের কারণে এবার এসির চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বছর তাপদাহ এতটাই ভয়াবহ আকার নিয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে স্কুল-কলেজ এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এপ্রিলের শুরুতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরে বাতাস ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার তারতম্য থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক জলবায়ু প্রবণতা এল নিনোর কারণে এই তাপদাহ দেখা দিয়েছে। প্রতি দুই থেকে সাত বছরে একবার এল নিনোর কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে নয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন ঘটে।

এদিকে তাপদাহ অব্যাহত থাকায় কয়েক দফা হিট এলার্ট বাড়িয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত ২৫ এপ্রিল আবহাওয়া অধিদপ্তর হিট এলার্ট জারি করে জানিয়েছিল, তাপদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে।

ঢাকার মিরপুরে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের দোকানের মালিক খলিলুর রহমান বলেন, তাপদাহ শুরু হওয়ার পর থেকে এসি টেকনিশিয়ানের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন নতুন এসি বসানোর কাজের অর্ডার নিয়ে আসেন। এছাড়া অন্তত তিনি থেকে চারজন মেরামতের কাজ নিয়ে আসেন।'

'কিন্তু আমাদের পর্যাপ্ত কর্মী নেই, তাই আমরা প্রতিদিন মাত্র দুই থেকে তিনটি এসি বসাতে পারি। তাই বাকিগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে বসানোর সময় ঠিক করি। কোনো কোনোটার জন্য চার দিন বা তারও বেশি সময় পরে বসানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।'

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও টেকনিশিয়ানের এত চাহিদা আগে কখনো দেখেননি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ সজীব ইসলাম বলেন, এসি বসানোর চাহিদা অনেক বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন তাকে প্রতিদিন ছয়টি এসি বসাতে হয়।

এদিকে দেশে এসি বিক্রি নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য বাজার তথ্য নেই। তকে নির্মাতা ও খুচরা বিক্রেতারা অনুমান করেছেন, ২০২৩ সালে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার এসি বিক্রি হয়েছিল, যা বছরে প্রায় ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২০টি দেশি-বহুজাতিক কোম্পানি এসি তৈরি ও সংযোজন করছে।

চীনের মিডিয়া কোম্পানির পণ্য তৈরি ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান এলিট এসির ব্র্যান্ড ম্যানেজার মোজতবা নাদিম বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এসি বিক্রি অনেক বেড়েছে।

এ কারণে টেকনিশিয়ানের চাহিদাও অনেক বেড়েছে বলে জানান তিনি।

তার ভাষ্য, 'একজন টেকনিশিয়ান যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেন, তাহলে তিনি পাঁচটি এসি বসাতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে টেকনিশিয়ানের চাহিদা অনেক বেশি। ফলে একটি অর্ডার পূরণ করতে তিন থেকে চার দিন সময় লেগে যায়।'

তিনি পরামর্শ দেন, এখন মানুষকে টেকনিশিয়ানের কথাও ভাবতে হবে। কারণ তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

তিনি জানান, এছাড়াও একটি এসি কেমন পারফর্ম করবে তাও অনেকাংশে সঠিকভাবে বসানোর ওপর নির্ভর করে। তাই দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে বসানো গেলে এসি ভালো সেবা দেবে। এ কারণে দক্ষ টেকনিশিয়ানের চাহিদা বেশি।

Comments

The Daily Star  | English

16 killed as police open fire on Gen Z protest in Nepal

Police used live ammunition, tear gas, and water cannons against protesters demonstrating against social media restrictions and corruption

4h ago