রপ্তানি পণ্য পরিবহন

ঢাকা বিমানবন্দরে খরচ বেশি, দিল্লি বিমানবন্দরে ঝুঁকছে ক্রেতারা

স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলো পণ্য পরিবহনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে দিল্লি বিমানবন্দরকে বেছে নিচ্ছে। কারণ দিল্লি বিমানবন্দর কম শুল্ক আরোপ করে করে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দরের শুল্ক এত বেশি যে, ক্রেতারা তাদের পণ্য ট্রাকে করে বেনাপোল ও পেট্রাপোল হয়ে ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে- শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে এক কেজি পোশাক পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে পরিবহন করতে খরচ হয় ৩ ডলার। অথচ একই পরিমাণ পণ্য দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাঠালে খরচ হয় ১ দশমিক ২ ডলার।

মূলত শাহজালাল বিমানবন্দরের উচ্চ শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও সার্ভিস চার্জ গ্রাহকদের ঢাকা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কারণ এখানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৭২ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। আবার সময়মতো ফি পরিশোধ না করলে ৬০ শতাংশ জরিমানা আদায় করা হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার টন কার্গো জাহাজি হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার টন পোশাক পণ্য এবং ৩০ হাজার টন শাকসবজি, ফল ও অন্যান্য সামগ্রী।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বিমানবন্দর দিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টন কার্গো বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার টন পোশাক পণ্য এবং ২৪ হাজার টন ফল, শাকসবজিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, উচ্চ শুল্কের কারণে গত বছর আট হাজার টনেরও বেশি কার্গো বিশেষ করে পোশাক পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দরকে বাদ দিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর এর পরিমাণ বেশি, কারণ ক্রেতারা দিল্লি বিমানবন্দরকে তাদের ব্যবসায়ের জন্য সাশ্রয়ী মনে করছে।'

'শাহজালাল বিমানবন্দরকে বাদ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ টন কার্গো দিল্লিতে পাঠানো হয়,' যোগ করেন তিনি।

এখানে অতিরিক্ত চার্জের কারণে স্থানীয় এয়ারলাইন্স, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার, কুরিয়ার কোম্পানি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারসহ সংশ্লিষ্ট অনেক খাত ব্যবসা হারাচ্ছে।

কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, 'বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ব্যবসা করার চেষ্টা করা অন্তত আটটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স। কিন্তু উচ্চ শুল্কের কারণে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না।'

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, 'ঢাকা বিমানবন্দরে ফ্রেইট চার্জ অত্যন্ত বেশি।'

তিনি বলেন, দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে ঢাকা থেকে ভারতের রাজধানীতে পণ্য পরিবহনের পরও রপ্তানিকারকরা প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ মার্কিন সেন্ট সাশ্রয় করতে পারেন।

এদিকে গত বছর এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহনের প্রধান সমুদ্রপথ লোহিত সাগরের সুয়েজ খালের ঐতিহ্যবাহী রুট ব্যবহারকারী কার্গোবাহী জাহাজগুলো হুতিদের হামলার শিকার হয়েছে। এরপর থেকে উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহন বেড়েছে।

ফলে প্রতিবেশী দেশটির রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কার্গো দিল্লি বিমানবন্দরে চাপ সৃষ্টি করেছে। তাই তারা সময়মতো ভারতের তৈরি পণ্য পাঠাতে পারছেন না।

তারা ইতোমধ্যে দিল্লির কাছে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত চার্জ আরোপের দাবি জানিয়েছে। যেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারক তাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করতে না পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো বিমানবন্দর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে পারে। কার্গোর পরিমাণ বাড়লে ঢাকার এয়ারলাইন্সগুলোও চার্জ বাড়ায়। এ ধরনের ব্যয় বৃদ্ধি অবশ্য সাময়িক।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এসএম মান্নান কচি মনে করেন, দিল্লি বিমানবন্দর বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করলে রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে না।

তবে খরচ বাড়বে বলে স্বীকার করেন তিনি।

এদিকে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ। বর্তমানে ৪০০ টন রপ্তানিযোগ্য পণ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা থাকলেও সাধারণ সময়ে দৈনিক শিপমেন্ট গড়ে ৮০০ টন এবং ব্যস্ত সময়ে ১ হাজার ২০০ টনে পৌঁছে যায়।

অন্যদিকে শাহজালালের ছোট কার্গো ভিলেজ থেকে পণ্য চুরি, অযত্নে ফেলে রাখা এবং পণ্যের মানের অবনতি হওয়া নিয়ে গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ আছে।

কয়েক বছর আগেও কাতার ও ইতিহাদ শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ডেডিকেটেড ফ্লাইটে কার্গো পরিবহন করত। এখন তারা হয়তো ফ্লাইট স্থগিত করেছে অথবা সক্ষমতা কমিয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে পরিবহন করা পণ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের মাধ্যমে বহন করা হয়, বাকিগুলো কার্গো ফ্লাইটে।

Comments

The Daily Star  | English
Strategies we can employ in tariff talks with the US

US tariff talks: Bangladesh writes to USTR, seeking date

Bangladesh yesterday sent its position paper to the United States Trade Representative (USTR), the chief trade negotiation body for the American government, and sought July 26 as the new date for launching the third and final round of tariff talks with the Trump administration.

9h ago