করপোরেট কর অপব্যবহারে বছরে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে বাংলাদেশ

কর
ছবি: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পন্থায় মুনাফা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া এবং বিত্তবানদের একাংশ বিদেশে সম্পদ পাচার করায় বাংলাদেশ বছরে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২৪ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদেশে ব্যবসারত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মুনাফার একাংশ বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। আর সম্পদশালীরা বিদেশে সম্পদ গড়ায় কর বছরে হারায় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের (টিজেএন) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কর ক্ষতির পরিমাণ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ২১ দশমিক চার শতাংশ।

এতে আরও বলা হয়, বহুজাতিক কোম্পানি ও সম্পদশালীরা কর ব্যবস্থার অপব্যবহারের কারণে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ প্রতি বছর ৪৯২ বিলিয়ন ডলার কর হারাচ্ছে।

প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশ করা হয়েছে যখন বার্ষিক উন্নয়ন ও পরিচালন খরচ মেটাতে প্রয়োজনীয় কর সংগ্রহ করতে পারছে না বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের রাজস্ব ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত ছিল সাড়ে আট শতাংশ, যা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বেশ কম।

বাংলাদেশে কর অনিয়ম ও কর ফাঁকির ঘটনা অনেক।

টিজেএন গত বছর 'স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস' প্রতিবেদন বলছে, 'করপোরেট করের অপব্যবহারের কারণে দেশটির বার্ষিক ক্ষতি ছিল ৩৯৬ মিলিয়ন ডলার। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে মুনাফা সরিয়েছে এক দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।'

এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে এক দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছে। এটি দেশের প্রায় ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির শূন্য দশমিক এক শতাংশ।

টিজেএন বলেছে, করপোরেট করের হার কমানো সত্ত্বেও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মুনাফা করপোরেট কর অবকাশে স্থানান্তরিত করেছে।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশে আরও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করতে বাংলাদেশ গত দেড় দশকে করপোরেট কর কমিয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে করপোরেট কর ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করেছে।

টিজেএন আরও বলেছে, করপোরেট করের হার কমানোর পর আরও বেশি কর পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

টিজেএনের বিবৃতিতে নেটওয়ার্কের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক লিজ নেলসন বলেন, 'আমরা কেমন সমাজে থাকতে চাই, তা বেছে নেওয়ার জন্য কর সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারগুলো অতি-ধনী ও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সম্পদশালী করতে করকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মনে করে, এটি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। অথচ তথ্যে দেখা যায় যে এটি বিপরীত প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাপী করের ক্রমবর্ধমান অপব্যবহারের কারণে বিত্তবানদের বিপুল সম্পদ আমাদের অর্থনীতিকে অনিরাপদ করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ আরও খারাপ অবস্থায় পড়েছে। পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।'

তার মতে, বিশ্বের নানান দেশের মানুষ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যথাযথভাবে কর আরোপের জন্য তাদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু সরকার করপোরেট করের ওপর তোষণের নীতি অব্যাহত রেখেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Manzoorul Islam (1951-2025): A life in letters and public conscience

Beyond the classroom, he was a leading voice for university autonomy and equal access to education

3h ago