কর আদায় বাড়াতে চাপ দেবে আইএমএফ

আইএমএফের প্রধান কার্যালয় ভবনের বাইরে প্রতিষ্ঠানটির লোগো দেখা যাচ্ছে। ছবি: এপি

কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শর্তে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রেক্ষাপটে দেশে রাজস্ব আদায় হতাশাজনক হওয়ায় সরকারকে চাপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।

ঋণের বাকি কিস্তি পেতে সরকারকে অবশ্যই কিউপিসি মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। এখনো কর আদায় সেই বাধ্যতামূলক মানদণ্ড ছুঁতে পারেনি।

আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টার জানান, সর্বশেষ ঢাকা সফরে আইএমএফ স্টাফ মিশন ইঙ্গিত দেয় যে তারা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ওপর জোর দেবে।

ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ার আগে দেশের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে স্টাফ মিশন গত মাসে ঢাকায় ছিল।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগের সুপারিশ প্রতিফলিত না হওয়ায় কর আদায় বাড়ানোয় জোর দিয়েছে আইএমএফ।

সংস্থাটির হিসাব অনুসারে, বিদ্যমান কর ব্যবস্থার ফলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পয়েন্ট বাড়বে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে কর আদায় দুই দশমিক ৬২ শতাংশ কমে এক লাখ ৩০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে।

অর্থবছরের প্রথমার্ধে আইএমএফ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দুই লাখ ১৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৭৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা।

পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয় থেকে কর-রাজস্ব আদায় ২৯ শতাংশ বাড়াতে হবে।

আগামী মাসে আইএমএফ বোর্ডের সামনে ঋণের চতুর্থ কিস্তি দেওয়ার প্রস্তাব তোলার আগে বাংলাদেশ সরকারকে এই ঋণ কর্মসূচির প্রতি প্রতিশ্রুতি হিসেবে রাজস্ব খাতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগসহ কিছু পরামর্শ দিয়েছে স্টাফ মিশন।

এই প্রেক্ষাপটে প্রায় ১০০ পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ফলে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট বা সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে। আগে তা ছিল পাঁচ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি যখন দুই অঙ্কে, তখন তড়িঘড়ি করে এ ধরনের অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, 'খুব সম্ভব, আইএমএফ কিউপিসির আওতায় কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত করবে। এ কারণে সরকার হঠাৎ কর আরোপ করেছে।'

তার মতে, বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোসহ হঠাৎ করে কর বাড়ানো নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষকে আরও চাপে ফেলবে।

সরকারের উচিত আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করা, যাতে সংস্থাটি এই মুহূর্তে কিউপিসির আওতায় কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত না করে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানান, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের কারণে রাজস্ব সংগ্রহ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা চলছে।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

5h ago