দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ৬ বছরের সর্বনিম্ন

অলঙ্করণ: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক আন্দোলন ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ না করায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে ১০৪ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

এটি অন্তত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য জানা যায়, বিনিয়োগ ও পুনঃবিনিয়োগ কমে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭১ শতাংশ কম বিনিয়োগ পেয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ ছিল ৩৬০ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৭৬ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৪৬ শতাংশ কম।

এ সময়ে দেশটিতে বিদেশিদের পুনঃবিনিয়োগ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ শতাংশ কমে ৭২ দশমিক নয় মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আমদানি বিধিনিষেধ, ডলার ঘাটতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মন্দায় ভুগছে তখন বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে নতুন তথ্য এলো।

গত আগস্টের শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়।

বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়ে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীরা সরকারি নীতি, অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ও সার্বিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেন।'

তিনি আরও বলেন, 'গত দুই থেকে তিন বছর ধরে দেশে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা চলছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। তাই নতুন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আসেনি।'

'জুলাই-সেপ্টেম্বর বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস। সে সময় দেশে অস্থিতিশীলতা থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমে যায়। তারা বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষার পথ বেছে নেন।'

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। এরপর এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন থেকে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এম মাসরুর রিয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হার অস্থিতিশীল হওয়ায় দেশের চলমান সামষ্টিক অর্থনীতি সংকটে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া বিস্ময়কর নয়।'

'সে সময়ে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকায় তা বিদেশি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করেছিল,' জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিদ্যমান ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। তাই বিনিয়োগ কম। তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'বিনিয়োগকারীরা অন্তর্বর্তী সরকার থেকে নির্বাচিত সরকারে উত্তরণ পর্যবেক্ষণ করছেন। এটি অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।'

এফআইসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী দেশে নতুন বিদেশি বিনিয়োগের ওপর রাজনৈতিক পালাবদলের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তার মতে, এই ধরনের রূপান্তর প্রায়শই নীতিগত অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে।

'এই অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ঝুঁকি নিতে রাজি নন,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ অস্থিতিশীল। বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কৌশল অনুসরণ করছেন।'

তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যেও সমন্বয়ের অভাবের কথা উল্লেখ করেন।

বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে আন্তঃসংস্থা সহযোগিতা ও সুস্পষ্ট নীতি নির্দেশনার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে এই অসঙ্গতি বিনিয়োগকারীদের চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

2h ago