ব্যাংক সংস্কারে নানা উদ্যোগ, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কী হবে?

অনিয়ম, কেলেঙ্কারি ও সুশাসনের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) উভয়ের জন্য সংস্কার প্রয়োজন। তবে উভয় খাতের সংকট এতই বেড়েছে যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বেছে নিতে হবে কোন খাতকে আগে গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার করা হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন খাতে আগে সংস্কার হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্য খাত কতদিন অবহেলিত অবস্থায় টিকে থাকতে পারবে?

ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলো যত বেশি সময় সংস্কারের বাইরে থাকবে তাদের অবস্থা তত খারাপ হবে। ব্যাংকগুলোর মতো ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করে বলছেন যে, দেরি হয়ে গেলে দুই খাতই পুনরুদ্ধারেরও অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

দেশের ৩৫ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্তত এক ডজন বর্তমানে তীব্র তারল্য সংকটে আছে। তারা আমানতকারীদের টাকা পরিশোধে করতে পারছে না। বছরের পর বছর ধরে এই খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়ে চলছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টাস্কফোর্স গঠন, নতুন আইন প্রবর্তন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের মতো বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ ব্যাংকিং খাতের একগুচ্ছ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে নতুন তহবিল দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তবে সংকটে জর্জরিত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সংস্কার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত বছরের আগস্টের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রুগ্ন এ খাতের সংস্কারে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতকে পুনরুজ্জীবিত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধে সহায়তা করতে তহবিল দেওয়া থেকে বিরত আছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্ধশতাধিক ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছিলেন না। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি দিতে বাধ্য হয়েছে।

এ উদ্যোগের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখা জরুরি।'

এটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: ব্যাংকগুলো যদি আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল পায়, তবে দুর্বল ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন একই ধরনের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে?

পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, এফএএস ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্সসহ এক ডজনেরও বেশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছেন না।  যেমন, আভিভা ফাইন্যান্সের আমানতকারী খলিল আহমেদ খান গত ২১ জানুয়ারি মেয়াদি পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পুরো আমানত ফেরত পাননি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি তিন এফডিআরে ২৩ লাখ টাকা জমা করি। বারবার অনুরোধের পর প্রতিষ্ঠানটি আট লাখ ৯৮ হাজার টাকা দিয়েছে। এখনো ১৪ লাখ এক হাজার টাকা বাকি।'

আরও অনেক আমানতকারী নিজেদের টাকার খোঁজে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানগুলোয় যান, ফিরে আসেন খালি হাতে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ফোরাম বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দুই দফা দেখা করলেও দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সহায়তার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পায়নি বলে জানিয়েছে তারা।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএলএফসিএ'র সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে যে তারা বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।'

তার মতে, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার শেষ হলেই ব্যাংক বহির্ভূত খাতের সংস্কার শুরু হবে।

ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মনে করেন, দুই খাতেই সংস্কার এক সঙ্গে চলতে পারে। তিনি আমানতকারীদের টাকা ফিরে পাওয়া নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।

মাইডাস ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বেশিরভাগ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য তারল্য সহায়তা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাংকিং খাতের সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারা আশ্বস্ত করেছেন যে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতে বড় সংস্কারের পরিকল্পনা আছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত সংস্কার শুরুর এখনই উত্তম সময়।'

তিনি সুপারিশ করে বলেন যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য ব্যাংকগুলোর মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষা পরিচালনা করা উচিত এই মুহূর্তে।

Comments

The Daily Star  | English
US new import tariffs under Trump

Trump puts 35% tariff on Canada, eyes 15%-20% tariffs for others

“We're just going to say all of the remaining countries are going to pay, whether it’s 20% or 15%. We’ll work that out now,” Trump says

3h ago