চাইলেই টাকা ছাপানো যায় না কেন

বাংলাদেশে টাকা ছাপানোর নিয়ম

অর্থ সংকট থেকে উত্তরণের সবচেয়ে সহজ উপায় হতে পারত টাকা ছাপানো। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহসা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় না। কেবলমাত্র নিরুপায় হলেই বাড়তি টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাহলে প্রশ্ন আসে কেন টাকা ছাপানোর বেলায় এত রক্ষণশীলতা?

এক কথায় উত্তর হলো—ইচ্ছামতো টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতি বাড়ে, পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যায়। এ কারণে টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র বিতর্ক হতে দেখা যায়।

সবশেষ, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংকটে থাকা ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য টাকা ছাপায়।

গত বছরের নভেম্বর সংকটে থাকা এই ব্যাংকগুলোর জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপায় বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

এর বাইরে স্বাভাবিক অন্যান্য কারণেও টাকা ছাপানো হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে—

•         দৈনন্দিন ব্যবহারের কারণে নোট নষ্ট হয়। এই পুরোনো নোট তুলে নিয়ে নতুন নোট ছাপানো হয়, যাতে লেনদেনে সমস্যা না হয়।

•         যখন অর্থনীতির আকার বাড়তে থাকে, তখন লেনদেনের পরিমাণও বেড়ে যায়। বাজারে টাকার লেনদেন সচল রাখতে নতুন নোট ছাপা হয়।

•         এ ছাড়াও, উৎসব উপলক্ষে বাজারে টাকার লেনদেন বেড়ে যায়। সেসময় অস্থায়ীভাবে টাকার চাহিদা মেটাতে নতুন নোট ছাপা হয়।

অতিরিক্ত টাকা ছাপানো কেন ঝুঁকিপূর্ণ

সরকারের ঘাটতি পূরণ করার জন্য অতিরিক্ত টাকা ছাপা হলে তা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর মানে টাকার সরবরাহ বেড়ে যাওয়া। এর পাশাপাশি উৎপাদন না বাড়লে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় 'হাইপারফ্লেশন'।

বিভিন্ন সময় প্রচুর পরিমাণে ব্যাংক নোট ছেপে মারাত্মক মূল্যস্ফীতির ফাঁদে পড়েছে অনেক দেশ। ২০০০ সালের শুরুতে মধ্য আফ্রিকার কঙ্গোতে যুদ্ধে খরচ জোগাতে জিম্বাবুয়ের সরকার বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপে। এর পরিণতিতে ২০০৮ সালে দেশটিতে এক বছরে মূল্যস্ফীতি পৌঁছায় ২৩ কোটি ১০ লাখ শতাংশে।

২০১৯ সালে ভেনেজুয়েলাতেও একই ঘটনা ঘটে। সেই বছর বাজেট ঘাটতির ৩০ শতাংশ মেটাতে সরকার অতিরিক্ত টাকা ছাপায়। এর ধারাবাহিকতায় মূল্যস্ফীতি একপর্যায়ে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার শতাংশ। দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত মার্কিন ডলারকে সরকারি মুদ্রা হিসেবে চালু করে সংকট কাটাতে সক্ষম হয়। ভেনেজুয়েলা এখনো মূল্যস্ফীতি থেকে বেরিয়ে আসতে লড়াই করছে।

এসব কারণে কোনো দেশ চাইলেই ঘাটতি মেটাতে ইচ্ছামতো নতুন নোট ছাপাতে পারে না।

Comments

The Daily Star  | English

Macroeconomic challenges to persist in Jul-Dec: BB

BB highlights inflation, NPLs, and tariff shocks as key concerns

3h ago