স্টারলিংকের ৪ স্থানীয় গেটওয়ে স্থাপন

স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড সারা দেশে চারটি স্থানীয় গেটওয়ে স্থাপন সম্পন্ন করেছে। ইলন মাস্কের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের উপস্থিতি আরও দৃঢ় করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সাম্প্রতিক পরিদর্শনে জানা গেছে, গাজীপুরের হাইটেক পার্কে দুটি এবং রাজশাহী ও যশোরে একটি করে গেটওয়ে স্থাপন করা হয়েছে।
তবে দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, পরিদর্শনের সময় স্টারলিংকের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় গেটওয়েগুলো পুরোপুরি কার্যকর কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি বিটিআরসি।
অন্যদিকে, স্থানীয় অংশীদার কোম্পানিগুলোর দাবি, ৯ আগস্ট থেকে কালিয়াকৈরের গেটওয়ের মাধ্যমে এবং ২০ আগস্ট থেকে রাজশাহী ও যশোরের গেটওয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই বাণিজ্যিক ট্র্যাফিক চালু হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য স্টারলিংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পরিদর্শন
স্টারলিংক সাধারণত স্থানীয় গেটওয়ে স্থাপন করে একটি দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোর সাথে তার স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সংযোগ করার জন্য। এর মাধ্যমে দ্রুতগতির সংযোগ, কম ল্যাটেন্সি, বিধিনিষেধ মানা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত হয়।
এর আগে বিটিআরসি স্টারলিংককে তিন মাসের ব্যতিক্রমী ছাড় দিয়েছে, যার মাধ্যমে গেটওয়ে ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করতে পারে। যদিও নির্দেশিকা অনুযায়ী গেটওয়ে স্থাপন বাধ্যতামূলক।
স্টারলিংককে গত ২৯ এপ্রিল অপারেটিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৮ মে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়, যার মেয়াদ গত ৭ আগস্ট শেষ হয়।
লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী, সেবা শুরু করার আগে কোম্পানিকে অন্তত একটি গেটওয়ে সিস্টেম বাংলাদেশে স্থাপন করতে হবে।
বিটিআরসির নথি অনুসারে, ১০ আগস্ট স্টারলিংক ইমেলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানায় চারটি গেটওয়ে স্থাপন করা হয়েছে, তবে কমিশনের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি জমা দেওয়া হয়নি।
এরপর বিটিআরসি গত ১৩ ও ১৬ আগস্ট বিটিআরসি অবকাঠামো যাচাইয়ের জন্য পরিদর্শনের নির্দেশ দেয় এবং মাঠ পর্যায়ে দল পাঠায়।
বিটিআরসির নথি অনুসারে, পরিদর্শন দল দেখেছে যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটিতে বড় আকারের অ্যান্টেনা কাঠামোসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। এসব গেটওয়ে পরিচালনা করছে স্থানীয় টায়ার-থ্রি সার্টিফায়েড ডেটা সেন্টার ফেলিসিটি আইডিসি লিমিটেড (এফআইডিসি), যারা অবকাঠামোগত সহায়তাও দিচ্ছে।
রাজশাহীতে নির্মিত আরেকটি গেটওয়ে পরিচালনা করছে স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস এবং সামিট কমিউনিকেশন্স উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার লিংকের মাধ্যমে সাইটটিকে কালিয়াকৈরের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
যশোরে একাধিক অ্যান্টেনাসহ একটি গেটওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, যদিও সাইটের আরেকটি অংশে কাজ এখনো চলমান। এই গেটওয়েটিও পরিচালনা করছে এফআইডিসি।
এছাড়া, ফাইবার@হোম যশোর ও কালিয়াকৈরের গেটওয়ের জন্য অতিরিক্ত বৃহৎ পরিসরের সংযোগ সরবরাহ করছে।
স্টারলিংক মাঠ পর্যায়ে তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি কোম্পানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
ইতোমধ্যে, স্টারলিংক রবি আজিয়াটা পিএলসি এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) সাথে চুক্তি সই করেছে, যার ফলে তারা তাদের অনুমোদিত রিসেলার।
রবির সাথে স্টারলিংকের চুক্তির অধীনে, রবি দুটি পরিষেবা স্তর, লোকাল প্রায়োরিটি এবং গ্লোবাল প্রায়োরিটি বাজারজাত করবে, যা ফিক্সড ও পোর্টেবল উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে।
রবির চিফ কর্পোরেট এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, এই টেলিকম অপারেটর তাদের এন্টারপ্রাইজ চ্যানেল, রিটেইল আউটলেট এবং কমিউনিটি ওয়াইফাই মডেলের মাধ্যমে স্টারলিংক পরিষেবাগুলো গ্রামীণ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগটি ই-লার্নিং, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং ডিজিটাল কমার্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে সহায়তা করবে।
বিএসসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (বিক্রয় ও বিপণন) শাহ আহমেদুল কবির বলেন, এর আগে বিএসসিএল (বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড) আড়াই মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তির মাধ্যমে স্টারলিংকের হার্ডওয়্যার এবং ডেটা প্যাকেজ সংগ্রহ ও পুনরায় বিক্রি করার জন্য চুক্তি করে, যা তাদের বঙ্গবন্ধু-১ এর বাইরেও পোর্টফোলিওকে বিস্তৃত করবে।
স্টারলিংক রিসেলার ফ্রেমওয়ার্কের অংশ হিসেবে, স্টারলিংক বাংলাদেশ টার্মিনালগুলো আমদানি করবে এবং বাংলাদেশি মুদ্রায় বিএসসিএলসহ স্থানীয় রিসেলারদের কাছে বিক্রি করবে।
রিসেলাররা হার্ডওয়্যারের উপর ১৫ শতাংশ এবং পরিষেবা চার্জে ৫ শতাংশ ছাড় পাবে। এছাড়াও ক্লায়েন্ট এবং পরিষেবা পরিচালনার জন্য তারা স্টারলিংকের রিসেলার পোর্টাল এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) অ্যাক্সেসও পাবে।
রিসেলাররা তাদের নিজস্ব মূল্য নির্ধারণ করতে, সরাসরি গ্রাহকদের বিল করতে এবং ইনস্টলেশন ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মতো ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস দিতে পারবে।
সম্ভাব্য গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক, হাসপাতাল, ফ্যাক্টরি, ডেটা সেন্টার, অফশোর ইনস্টলেশন, এবং এভিয়েশন, মেরিটাইম, এনার্জি, কনস্ট্রাকশন ও মিডিয়ার মতো ক্ষেত্রগুলো।
সাধারণত, স্টারলিংক বিশ্বজুড়ে ব্যক্তিগত গ্রাহকদের কাছে সরাসরি তাদের ওয়েবসাইট থেকে বিক্রি করে। তবে বাংলাদেশে বিএসসিএল এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলো ব্যক্তিগত এবং বড় প্রতিষ্ঠান—উভয়কেই এই সেবা দিতে পারবে। তবে ব্যক্তিগত গ্রাহকেরা চাইলে সরাসরি স্টারলিংকের ওয়েবসাইট থেকেও কিনতে পারবেন।
Comments