ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদ, টার্গেটে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অল্প সময়ে শেয়ারবাজারে বেশি মুনাফার লোভনীয় বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, যেখানে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে তথাকথিত 'বিশেষজ্ঞ' সদস্যও রাখা হয়।
একবার বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলে তাদের ভুয়া ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে বলা হয়। পরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয় বিকাশ কিংবা নগদ ব্যবহারের মাধ্যমে। এভাবেই প্রতারকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে ফাঁদে ফেলছে।
ডিসমিসল্যাবের এক মাসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন প্রতারণার চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির তদন্ত দলের সদস্যরা বিনিয়োগকারী সেজে একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দেন এবং সরাসরি প্রতারণার পুরো প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করেন। তারা এমন অন্তত ২০টি সক্রিয় গ্রুপ শনাক্ত করেছেন।
এসব গ্রুপে সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড (সিবিএল) ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের মতো বৈধ প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের এমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেওয়া হয়, যেন পুরোটাই বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়।
তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সেপ্টেম্বর মাসেই অন্তত ১৫টি ফেসবুক পেজ থেকে শত শত বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের লক্ষ্য ছিল ব্যবহারকারীদের নতুন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিয়ে আসা। এমন অন্তত ২০টি গ্রুপ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব গ্রুপের সদস্য সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।
সিবিএলের নাম ব্যবহার করা গ্রুপে সদস্যদের একটি ভুয়া অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। আর ব্র্যাক গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি ভুয়া ওয়েবসাইটে, যা দেখলে হুবহু আসল ওয়েবসাইটই মনে হয়।
এরপর তাদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকারেজ চ্যানেল এড়িয়ে এমএফএস বা ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলা হয়। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা ব্যক্তির নাম ও ছবি ব্যবহার করা হয়।
প্রতারণার শিকার ব্রোকারেজ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা ডিসমিসল্যাবকে জানিয়েছেন, তারা এ ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) জানিয়েছেন।
কয়েক সপ্তাহ আগেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এমন প্রতারকদের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছিল। এতে বলা হয়, প্রতারক বিভিন্ন চক্র ডিএসইর নাম, লোগো, এমনকি অফিসের ঠিকানাও ব্যবহার করছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য। এরপর হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেছে, নিবন্ধন ছাড়া শেয়ারবাজারসংক্রান্ত পরামর্শ প্রকাশ করা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রিসার্চ অ্যানালিস্ট) বিধিমালা, ২০১৩ অনুযায়ী অবৈধ।
ভারতেও এর আগে এমন ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ও ভুয়া ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে শেয়ারবাজারে উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখানো হয়। আর শেষে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় কোটি কোটি রুপি।
Comments